জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোটঃ- দেখতে দেখতে কেটে গেছে ১১ পুরুষ। আজও পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে দুর্গাপুজো হয়ে চলেছে মঙ্গলকোটের কৃষ্ণপুরের জমিদার ভট্টাচার্য্যদের বাড়িতে। ‘মা’ এখানে ‘মহামায়া’ নামে পরিচিত। ঘরোয়া বা ‘গাদি’ পুজো হলেও সমস্ত গ্রামবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুজোয় মেতে ওঠে। শুধু ভট্টাচার্য বাড়ির নয় পাড়ার অন্যান্য বাড়ির বিবাহিতা মেয়েরা এইসময় বাপের বাড়িতে আসবেই। পুজোটা যে ওদের সবার। এইভাবেই সবার মিলিত অংশগ্রহণে প্রথম থেকেই ব্যক্তিগত পুজো হয়ে উঠেছে সর্বজনীন।
ভট্টাচার্য্য বাড়ির পুজোর সঙ্গে মিশে আছে অনেক কাহিনী। আপাত দৃষ্টিতে অলৌকিক বলে মনে হলেও যারা ‘ফল’ পেয়েছেন তারা গভীর ভাবেই বিশ্বাস করেন মায়ের জন্য তাদের এই সুফল।
শোনা যায় নবমীর হোমের কলা খেয়ে অনেক বন্ধ্যা নারী সন্তানবতী হয়েছেন। আজও তাদের পরিবার বংশ পরম্পরায় ঠাকুর তলায় গোবর ছড়া দেয়, কেউ নিয়ে আসে কচুশাক, পদ্মফুল, মুকুট। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে অনেকেই এখানে ছুটে আসেন।
এও শোনা যায় কোনো একসময় পাশের গ্রামের জনৈক ‘শম্ভু’ সাধু গ্রীষ্মকালে মায়ের মন্দিরে ধ্যান করার জন্য আসেন। প্রথমে মায়ের মন্দিরের টিনের চালে ঢিল পড়ে। সাধু উপেক্ষা করেন। তারপর হঠাৎ ঝড়ে মায়ের মাথার উপর চালা উড়ে যায়। আতঙ্কে সাধু গ্রীষ্মকালেও ভয়ে কাঁপতে থাকেন। এরকম অজস্র কাহিনী চালু আছে এই পুজোকে কেন্দ্র করে। কেউ বিশ্বাস করে, কেউ করেনা।
ষষ্ঠীর দিন গহনা পরিয়ে মা’কে আসনে বসানো হয়। সমস্ত রীতি মেনে পুজো হয়।দশমীর দিন গ্রামের সমস্ত এয়োতিরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করেন বলে একে ‘দাঁড়া’ সিঁদুর খেলা বলা হয়। সেইসময় ভট্টাচার্য্য বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সবার মাথায় সিঁদুর ছুঁয়ে দেন, হাতে তুলে দেন তেল ও আলতা।
বিসর্জনের মধ্যেও আছে অভিনবত্ব। দোলায় চাপিয়ে মন্দিরের চারপাশে তিনপাক ঘুরিয়ে মা’কে আনা হয় কৃষ্ণপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। সেখানে না দাঁড়িয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামে। ভট্টাচার্য্যদের নিজেদের পুকুরে বিসর্জন করা হয়।
এইভাবেই নানা বিশ্বাসের উপর ভর করে আজও জাঁকজমক পূর্ণভাবে হয়ে চলেছে ভট্টাচার্য্য বাড়ির পুজো। আন্তরিকতার জন্য একটা ঘরোয়া পুজো কীভাবে সর্বজনীন হয়ে উঠতে পারে তার নিদর্শন হয়ে থাকবে এই পুজো।
ভট্টাচার্য্য বাড়ির অন্যতম সদস্য সমীরণ ভট্টাচার্য্যের আশা আগামী দিনেও এই রীতি বজায় থাকবে। তিনি বললেন – জগজ্জননী ‘মা’ আমাদের সবার।