সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ– ডাক বিভাগের বিশেষ খামে জায়গা করে নিল বাঁকুড়ার ঐতিহ্যবাহী দুই প্রচীন শিল্প- বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাস ও শুশুনিয়ার পাথর শিল্প। সম্প্রতি বাঁকুড়ার এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হলে ডাক বিভাগের এক অনুষ্ঠানে এই বিশেষ খামগুলি প্রকাশ করেন ডাক বিভাগের কর্তারা।
এই বিশেষ খাম বাঁকুড়া মুখ্য ডাকঘর ও কলকাতা জিপিও-তে পাওয়া যাবে। তাছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে বরাত দিয়েও সংগ্রহ করা যাবে ডাক বিভাগের এই খাম। দক্ষিণবঙ্গ বিভাগের পোস্টমাস্টার জেনারেল শশীশালিনী কুজুর জানান, সারা বিশ্বে বাঁকুড়ার হস্তশিল্প ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মের কদর রয়েছে। আর ভারতীয় ডাক বিভাগের এই উদ্যোগের ফলে এই অসাধারণ শিল্পগুলি বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছে যাবে।
বিষ্ণুপুরের প্রচীন ও ঐতিহ্যবাহী দশাবতার তাস। হাতে তৈরি এই তাসে শিল্পীদের নিপুন রং তুলির টানে ফুটে ওঠে বিষ্ণুর দশটি রুপ অর্থাৎ দশটি অবতারের রূপ। একসময় মল্লরাজাদের আমলে এই তাস খেলা হতো। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে পুরনো পাথর খোদাই শিল্প শুশুনিয়ার পাথর শিল্প। শুশুনিয়া পাহাড়ের এই বিশেষ পাথরকে ‘নরসিংহপাথর’ও বলা হয়। অনেকেই মনে করেন, সম্রাট নরসিংহ নিজ হাতে এই পাথর খোদাই করেছিলেন। রাজা চন্দ্রবর্মন এখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। চতুর্থ শতকের কিছু খোদাই এখানে পাওয়া যায়।
বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাসের শিল্পী শীতল ফৌজদার বলেন, “আমরা খুবই আনন্দিত যে এই শিল্পকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হলো। সারা বিশ্ব এখন জানতে পারবে বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের এই দশাবতার তাসের সম্পর্কে।”
অন্যদিকে পাথর শিল্পীরা সরকারি এই উদ্যোগে খুশি হলেও কাজকর্ম নেই বলে হতাশা প্রকাশ করেন। এলাকার পাথর শিল্পী নিরঞ্জন কর্মকার বলেন, “অবশ্যই ভালো লাগছে শুনে যে শুশুনিয়ার পাথর শিল্পকে বিশ্বের মানুষ জানতে পারবে, তবে পাথরের অভাবে এই শিল্প এখন বন্ধ হয়ে আছে। পাথরের বদলে কাঠের এবং সিমেন্টের মূর্তি বানাতে হচ্ছে। বড় বড় শিল্পী রাজস্থানে চলে গিয়ছেন পেটের টানে। এখন শুধু ছোট খাট শিল্পীরাই এলাকায় রয়ে গেছেন।”
তবে এই প্রথমবার নয়। এর আগেও বিষ্ণুপুরের শ্যামরায়ের মন্দির, শিল্পী যামিনী রায়ের শিল্পকর্ম নিয়ে ডাক টিকিট প্রকাশিত হয়েছে ডাক বিভাগের তরফে। পাঁচমুড়া ও বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী শিল্প এবং তার পাশাপাশি মাদুর ও পটচিত্র নিয়েও ডাকবিভাগ বিশেষ কভার তৈরি করেছে।