নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– ধুঁকছে ‘দুর্গাপুর হাট’- প্রশাসনিক অব্যবস্থা সহ একাধিক কারণে হাট বন্ধের আশঙ্কা করছেন শিল্পাঞ্চলের হস্তশিল্পীরা। প্রসঙ্গত দিল্লি হাটের আদলে রাজ্যের হস্ত শিল্প ও শিল্পীদের উৎসাহ দিতে তাদের কাজ তুলে ধরতে ও হস্তশিল্পসামগ্রী ব্যবসায়ীকরণের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কুটির শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে কলকাতা, দুর্গাপুর, বোলপুর-শান্তিনিকেতন ও শিলিগুড়ি সহ একাধিক শহরে আরবান হাট চালু করা হয়। হস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে বিশাল পরিকাঠামো নিয়ে গড়ে ওঠে এই হাটগুলি। ২০১২ সালে দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র সিটিসেন্টার সংলগ্ন পলাশডিয়ায় প্রায় ৫৪ একর জমির জুড়ে গড়ে তোলা হয় এই আরবান হাট। সৈই সময় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুর হাটের উদ্বোধন করেছিলেন। যেখানে প্রায় ৩০০ হস্তশিল্পী যাতে একসাথে অংশগ্রহণ করতে পারেন তার জন্য ১২০টি স্টলের ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি হাটে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের থাকার সুবিধার জন্য তৈরি করা হয় দ্বিতল হোস্টেল। এমনকি হস্তশিল্পীদের হাটে অংশগ্রহণে উৎসাহ দিতে শিল্পীদের জন্য টিএডিএ (দিনপ্রতি ৭৫ টাকা) ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও বাংলার লোক সাংস্কৃতিকতে তুলে ধরতে ও হাটে লোক আকর্ষন করতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশেনের জন্য তৈরি করা হয় ওপেন অডিটোরিয়াম। পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাদের মনোরঞ্জনের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয় ফুড কোর্ট। কিন্তু এত কিছু পরিকাঠামো ও প্রচেষ্টা শুধুমাত্র প্রশাসনিক গাফিলতি ও অবহেলার জন্য জলে যেতে বসেছে বলে দাবি হাটে অংশগ্রহণকারী হস্তশিল্পীদের একাংশের।
শহরের হস্তশিল্পীরা জানাচ্ছেন বিগত ২১ সাল থেকে তারা হাজিরার টাকা (টিএডিএ) পাচ্ছেন না। এই তিন বছরের বেশ বড় অঙ্কের টাকা শিল্পীদের বকেয়া রয়েছে। তার উপর হাট পরিচালনা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অবব্যবস্থা। অভিযোগ হাটের প্রচারের জন্য কোনও ব্যবস্থাই করা হচ্ছে না। ফলে শহর সংলগ্ন এলাকার মানুষ তো দূরে থাক,শহরের মানুষও হাটের বিষয়ে জানতেই পারছেন না। যার জেরে প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে হাট। শিল্পীরা স্টল খুলে সারাদিন বসে থাকলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। আবার প্রায় তিন বছর ধরে হাজিরার টাকা (টিএডিএ) বকেয়া থাকায় শিল্পীরাও উৎসাহ হারাচ্ছেন এবং ভিন জেলার হস্ত শিল্পীরা কেউ আর আসছেন না এই হাটে। ফলে হাটে বিভিন্ন জেলার হস্তশিল্পী সামগ্রীর দেখা মিলছে না। আর যার জেরে উৎসাহ হারাচ্ছেন ক্রেতারাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের জনৈক এক হস্তশিল্পী অভিযোগের সুরে বললেন, মাত্র ৭৫ টাকা দিন প্রতি হাজিরা। কিন্তু সেই টাকা বিগত ৩ বছর ধরে বকেয়া। দুঃস্থ শিল্পীরা সামান্য ৭৫ টাকাও যদি না পায় তাহলে আর হাট মুখী হতে চাইছেন না। হাটে ১২০ টি স্টলের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২৬-২৭ জন শিল্পী হাটে অংশগ্রহণ করেছেন। আবার হাটের সময় বাড়িয়ে সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা করা হয়েছে। এদিকে সারাদিন স্টলে বসে থেকে ৫০০ টাকাও আয় হচ্ছে না। তাহলে শুধু শুধু হাটে গিয়ে কি লাভ? সেলও নেই হাজিরাও নেই। এদিকে রোজ যাতায়াতের একটা খরচ তো আছেই। আবার হাটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও প্রচারের অভাবে দর্শকশূন্য হয়ে পড়ে থাকছে অডিটোরিয়ামের দর্শকাসন। আর সেই আসন ভরাতে শিল্পীদেরই স্টল ছেড়ে সেখানে বসতে জোর করা হচ্ছে। হাটের ম্যানেজারকে এই অচলাবস্থা নিয়ে জানানো হলে তিনি শুধু ফান্ড নেই বলে দুহাত তুলে দিচ্ছেন। বিষয়টি নজরে এনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের একাধিকবার স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন শহরের হস্তশিল্পীরা। কিন্তু আখেরে কাজের কাজ কিছু হয়নি।
প্রসঙ্গত একটা সময় জমজমাট অবস্থা ছিল এই দুর্গাপুর হাটের। ক্রেতাদের ভিড়ে গমগম করতো গোটা হাট। স্থানীয় হস্ত শিল্পীদের মতে ব্যাবসাও চলতো রমরমিয়ে। কিন্তু অভিযোগ এতভালো পরিকাঠামো ও ব্যবস্থা সত্ত্বেও মাত্র দশ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র প্রশাসনিক অবব্যবস্থা ও অবহেলার জন্য ধুঁকছে দুর্গাপুর হাট। স্থানীয় হস্তশিল্পীদের দাবি এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে দুর্গাপুরের এই ‘আরবান হাট’। বিষয়টি নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন শহর তথা জেলার হস্তশিল্পীরা।