জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ছোট-বড় প্রতিটি জীবের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। Live & let live হওয়া উচিত মূলমন্ত্র। বাস্তবে অধিকাংশ সময় দেখা যায় নিষ্ঠুর ও অবিবেচকের মত মানুষ অবলা প্রাণীদের মেরে ফেলছে অথবা বেপরোয়াভাবে বৃক্ষচ্ছেদন করছে। যদি সেটা আবার বিষধর বা নির্বিষ সাপ হয় তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য। এক্ষেত্রে শিক্ষিত বা অশিক্ষিতের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা যায়না। তার মধ্যেও কেউ কেউ পরিবেশ সচেতনতার পরিচয় দিয়ে থাকেন।
গত ৫ ই অক্টোবর রাত প্রায় ৮ টা নাগাদ গুসকরা পুরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীপা মুখার্জ্জী বাড়ির পাশে একটি রাজসাপ দেখতে পান। প্রাথমিক পর্যায়ে আতঙ্কিত হলেও দীপা দেবী ফোন করেন পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী ও ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার তথা ভাইস চেয়ারম্যান বেলি বেগমকে। সঙ্গে সঙ্গে তারা হাজির হন দীপা দেবীর বাড়িতে এবং খবর দেন আউসগ্রাম বনদপ্তরে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা সেখানে হাজির হন। কিন্তু কেউ সাপটির কোনোরকম ক্ষতি না করে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সাপটির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
খবর পেয়েই আউসগ্রাম বনদপ্তর থেকে দু’জন ‘স্নেক ক্যাচার’ সেখানে হাজির হন এবং সাপটিকে উদ্ধার করে আউসগ্রামের গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন দীপা দেবী সহ অন্যান্যরা।
আউসগ্রাম বনদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হেমাংশু বাবু বললেন – খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাপটিকে উদ্ধার করে। তিনি উপস্থিত জনগণের কাছে আবেদন করেন – অবলা প্রাণীদের হত্যা না করে তাদের দপ্তরে খবর দিলে অবশ্যই তারা প্রাণীটিকে উদ্ধার করে তার যথাযথ পরিচর্যা করবে। এতে উপকৃত হবে প্রকৃতি।
সাপ উদ্ধারের কথা শুনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের ভূয়সী প্রশংসা করলেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার দত্তপুকুরের বন্যপ্রাণী প্রেমী তথা ‘প্রকৃতিকন্যা’ অদিতি গায়েন। তিনি বললেন – অবলা প্রাণী হলেও তাদেরও তো বাঁচার অধিকার আছে। তিনি আরও বললেন – সাপ একটা ভীরু প্রাণী। তার ক্ষতি না করলে সে কিন্তু আমাদের ক্ষতি করেনা। প্রসঙ্গত স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অদিতি যেমন একাধিক সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছে তেমনি এলাকার বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দাদের সাপ সম্পর্কে সচেতনও করেছে।
দীপা দেবী ও বনকর্মীদের প্রশংসা করে চেয়ারম্যান বললেন – মানুষ যদি একটু সচেতন হয় তাহলে হয়তো এই অবলা প্রাণীগুলো অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। তিনি আরও বললেন – চেষ্টা করব বনদপ্তরের কর্মী ও সর্প বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পুর-এলাকায় একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করার।