নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- শেখ রুস্তম, নদীয়া জেলার মায়াপুরের বাসিন্দা। দশম শ্রেণী অবধি পড়েছেন মায়াপুরের শ্রী চৈতন্যদেব নামাঙ্কিত স্কুলে। প্রায় 42 বছর আগে রোজগারের টানে এসে, রয়ে গিয়েছেন শিল্পনগরীতে। দুর্গাপুরের গোপালমাঠে মূল রাস্তার উপরে প্রায় 40 বছরের ব্যাবসা। একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে জামা কাপড় ধোয়া ও ইস্ত্রির কাজ করেন। দুই ছেলে মেয়েকে শিক্ষিত করেছেন, কয়েক বছর হয়েছে মাথা গোঁজার জন্য একচিলতে বাড়ি করেছেন। সম্প্রতি ছেলে চাকরি পেয়েছেন বেসরকারি সংস্থায়। দোকানে আগের মত বাজার নেই। তবু প্রতিবছর অগ্রহায়ন মাসের অমাবস্যায় ছুটে যান ছোট্ট সিঙ্গারণ নদীর পাড়ে। গাছ গাছালির মাঝে মায়ের বেদি। রেলের কু ঝিক ঝিক শব্দের মধ্যেই সারা রাত ধরে, সেখানে কালী মূর্তি এনে চলতে থেকে মায়ের পুজো। পাশেই ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ কারখানার আলোর ছটা এসে পড়ে। নিষ্ঠা ভক্তিতে নেই কোনও খামতি। এক দুটো বছর নয়, দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে সেখানে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে মা কালীর পুজো করে চলেছেন শেখ রুস্তম।
তার ডাকে সাড়া দিয়ে সঙ্গী হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা বন্ধু দিলীপ চক্রবর্তী। তিনিও এমন বন্ধু পেয়ে আপ্লুত। এই দুজনে মিলে প্রতি বছর অগ্রহায়ন কালীর পুজো করেন। কোনও জাঁকজমক নেই, আছে আন্তরিকতা। বন্ধু দিলীপ বাবুর সঙ্গে অত্যন্ত নিষ্ঠা ভরে অমাবস্যা তিথিতে মায়ের পুজো করেন রুস্তম। নিজে হাতে পুজোর সামগ্রী কেনা থেকে ভোগের খিচুড়ি, সবজি ও পায়েসের ব্যাবস্থা করেন তিনি। সারা রাত ধরে পুজোর শেষে আবার সকালের আলো ফুটতেই সব গুছিয়ে অমাবস্যা তিথি ছাড়তেই, সিঙ্গরণ নদীর জলে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে দুই বন্ধু ফিরে যান বাড়ি। নদীর জল মাথায় নিয়ে বলতে থাকেন, “আবার এসো মা, প্রাণ থাকতে তোমার এই পুজো যেন চালিয়ে যেতে পারি মা গো।” জাত পাতের উর্ধ্বে উঠে চেহারায় এক মুখ হাসি নিয়ে শেখ রুস্তম বলতে থাকেন, “যিনি আল্লাহ তিনিই কালী। আমাদের পরম ভরসা তো সেই ঈশ্বর।”