সংবাদদাতা, বাঁকুড়া:- দ্বন্দ্ব ও বিরোধে ভরা প্রায় ৬০০ বছরের প্রাচীন বাঁকুড়ার ছাতনা রাজবাড়ীর দুর্গাপুজোর ইতিহাস। পাশাপাশি প্রচীন এই পুজোয় রয়েছে অদ্ভূদ সব নিয়ম। প্রচীন রীতিনীতি প্রথা মেনে এই রাজ বাড়িতে মাতৃ আরাধনা হলেও রাজ পরিবারের সদস্যরা পুজোর পর আর মায়ের মুখ দেখেন না। দশমীর দিন সন্ধ্যা নামতেই রাজ পরিবারের সদস্যদের অলক্ষ্যে হয় বিসর্জন প্রক্রিয়া।
রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য প্রদীপ সিংহ দেও মুখেই জানা গেল ঠিক কিভাবে সামন্তভুম ছাতনা এবং মল্লভূম বিষ্ণুপুরের মধ্যে এক বিবাদের জেরে শুরু হয়েছিল ৬০০ বছরের প্রাচীন ছাতনা রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রদীপ সিংহ দেও জানান ছাতনার ভূমিপুত্র চারণকবি বড়ু চন্ডীদাসকে কেন্দ্র করে চরম বিবাদ সৃষ্টি হয় বিষ্ণুপুর এবং সামন্তভুম ছাতনার মধ্যে। তারপর এই বিবাদ মেটাতে সন্ধি হয়। কথিত আছে সন্ধিতে উল্লেখ করা ছিল সামন্তভূমের কুলদেবী মা বাসুলি পুজিত হবেন বিষ্ণুপুরে এবং মল্লভূমের মা মৃন্ময়ীর আরাধনা হবে সামন্তভুম ছাতনায়। তখন থেকেই শুরু ছাতনা রাজবাড়ীর বিষ্ণুপুরী আদলে দুর্গোৎসব।
এখনও ছাতনা রাজপরিবারে নিষ্ঠা ভরে পূজিত হন মা মৃন্ময়ী। নিজের হাতে পুজো করেন রাজাদের বর্তমান বংশধর প্রদীপ সিংহ দেও। এখানে পুজার পর পুনরায় বাসুলি মন্দিরে গিয়ে পুজো সেরে নেন মানসিক শান্তির জন্য।
নির্ঘণ্ট অনুযায়ী দুর্গোৎসব শেষ হলে আর মন্দির মুখো হননা রাজ পরিবারের সদস্যরা, মুখ দর্শন করেন না মা মৃন্ময়ীর। বিসর্জনের দিন সূর্যাস্তের পর ছাতনার এক বিশেষ পাড়া থেকে জমা হন মানুষজন। বংশপরম্পরায় তারাই বিগত ৬০০ বছর ধরে রাজবাড়ির বিসর্জনের কাজ করে আসছেন। বিসর্জনের সময় ঘরের ভেতরে থাকেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। তাদের অজান্তেই হয়ে যায় মায়ের বিসর্জন। প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা এই অদ্ভূদ প্রথা আজও মেনে চলেন ছাতনা রাজ পরিবারের সদস্যরা।