জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- বিজ্ঞানের দৌলতে প্রযুক্তি আজ অনেক উন্নত। নিত্য নতুন আবিষ্কারের হাত ধরে বিশ্ব মানুষের হাতের মুঠোয়। পৃথিবীর বুক ছেড়ে মানুষ পাড়ি দিয়েছে মহাকাশে। পা রেখেছে চাঁদের মাটিতে। তারপরও শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যেই হোকনা কেন আজও বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে মানব সমাজকে।
তাইতো সদ্যজাত শিশুর গলায় ঝোলে মাদুলি। বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হাতের দশ আঙুলে শোভা পায় আংটি, বাহুমূলে বাঁধা থাকে তাবিজ। পরীক্ষায় ভাল ফল, চাকরি অথবা লটারিতে টাকা পাওয়ার আশায় অনেকেই এগুলো ব্যবহার করে। কেউ কেউ আবার হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে ঠাকুর তলায়। ভক্তিভরে গ্রহণ করে ঠাকুরের চরণামৃত। বাত নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করে বিশেষ কোনো স্থানের মাটি। এরকম হাজার বুজরুকিতে মানুষের গভীর বিশ্বাস। যারা মাদুলি বা তাবিজ দিচ্ছে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষ তাদের জিজ্ঞাসা করতে ভুলে যায় তারা কেন নিজের উন্নতির জন্য এগুলো ব্যবহার করছে না?
এইসব কুসংস্কার থেকে মানুষকে সচেতন করার জন্য গত ১২ ই অক্টোবর গুসকরা বিজ্ঞান কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আউসগ্রামের যাদবগঞ্জ আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ শিরোনামে কুসংস্কার বিরোধী একটি অনুষ্ঠান হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে এইসব বুজরুকির রহস্য হাতে-কলমে ফাঁস করা হয় এবং মানুষকে সচেতন করার জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন গুসকরা বিজ্ঞান কেন্দ্রের দুই বিজ্ঞান কর্মী অপূর্ব কোনার ও ভুবন ঘোষ। প্রসঙ্গত দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটি কুসংস্কার সম্পর্কে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করে চলেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন রাণা বললেন- যেভাবে গল্প, অভিনয়, গান ইত্যাদির মাধ্যমে কুসংস্কার সম্পর্কিত বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে তাতে আমরা অভিভূত। আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও খুব খুশি। তাদের অনুরোধ পুজোর পর আরও একদিন এই অনুষ্ঠানটি হোক। জটিল বিষয় সহজভাবে তুলে ধরার জন্য তিনি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অপূর্ব বাবু ও ভুবন বাবুকে ধন্যবাদ জানান।
গুসকরা বিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক অমল দাস বললেন – সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একদল দীর্ঘদিন ধরে সমাজকে ঠকিয়ে চলেছে। তাদের কথা বলার ভঙ্গিমার জালে শিক্ষিত বা অশিক্ষিত প্রত্যেকেই আটকে যাচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বুজরুকির রহস্য ফাঁস করার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই সফল।