সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- প্রায় ৪৫০ বছরের প্রাচীন বাঁকুড়ার রানীবাঁধ ব্লকের অম্বিকানগর বিপ্লবী রাজ বাড়ির পুজো। রাজা বা রাজত্ব কোনোটাই না থাকলেও এখনও প্রচীন সেই রীতিনীতি মেনে হয়ে চলেছে মাতৃ আরাধনা।
অম্বিকানগরের রাজ বাড়ি এক সময় ছিল বিপ্লবীদের আস্তানা। এখানে তৈরি হত অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের অস্ত্র সস্ত্র। রাতের অন্ধকারে কখনও রাজা আবার কখনও বিশ্বস্ত রাজ কর্মচারী সেই অস্ত্র ও রসদ নিয়ে পৌঁছে যেতেন বিপ্লবীদের গোপন ডেরায়। বাঁকুড়ার কুমারী নদীর তীরে অম্বিকানগরের সেই রাজপ্রসাদ আজ পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে,আগাছায় ঢেকে গেছে রাজ বাড়ি। শুধু অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবীদের ঐতিহ্য বাহী স্মৃতি নিয়ে অম্বিকানগরের বুকে টিকে রয়েছে প্রায় ৪৫০ বছরের প্রাচীন দুর্গা পুজো।
রাজ বাড়ির ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৬১১ সালে যখন খড়গেশ্বর ধবল দেব প্রথম রাজা হন তখন তিনি অম্বিকানগরে এই রাজপ্রাসাদ তৈরি করেন এবং তখন থেকেই জাঁক-জমক করে দুর্গাপুজো শুরু করেন। ১৯০৭-০৮ সাল নাগাদ অম্বিকানগরের ষষ্ঠ রাজা রাইচরন ধবল দেব প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই সময় অম্বিকানগর রাজত্বের মধ্যে থাকা ছেঁদাপাথরে জঙ্গলে গোপনে বিপ্লবীদের জন্য তৈরি হতো বারুদ ও বন্দুক। এছাড়াও অম্বিকানগর ও ছেঁদাপাথর এলাকায় নিজের উদ্যোগে দুটি সশস্ত্র বিপ্লবী বাহিনিও গড়ে তুলে ছিলেন রাইচরন ধবল দেব। কথিত আছে রাজা রায়চরন ধবল দেব প্রায়ই নিজে গভীর রাতে ঘোড়া ছুটিয়ে পৌঁছে যেতেন গভীর জঙ্গলে বিপ্লবীদের ডেরায়। এমনকি প্রফুল্ল চাকি, বারীন ঘোষ, নরেন গোস্বামী, ভূপেশ দত্ত সহ ক্ষুদিরাম বসুর মতো বিপ্লবীরাও গোপনভাবে বৈপ্লবিক কাজকর্ম চালাতেন এই ছেঁদাপাথর জঙ্গলে। সেই সূত্রে রাজা রাইচরণ ধবল দেবের সাথে অম্বিকানগরের রাজবাড়ির পুজোতে অনেক বিপ্লবী যেতেন এবং পুজো দিয়ে মায়ের নামে শপথ নিতেন দেশেরে স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদানের। তাই অম্বিকানগরে রাজ বাড়ির পুজো ক্রমশ বিপ্লবীদের পুজো হিসেবে পরিচিতি পায় এবং রাজা রাইচরন ধবল দেব বিপ্লবী রাজা হিসাবে পরিচিতি পান।
ধীরে ধীরে জেল্লা হারিয়েছে অম্বিকানগর রাজ পরিবার। সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে বিশাল রাজ প্রাসাদ। শুধু ঐতিহ্য ময় বাংলার বিপ্লবীর ইতিহাসে মহান স্মৃতি বুকে আগলে আজও অম্বিকানগর রাজ বাড়িতে প্রাচীন রিতি মেনে চলে আসছে দুর্গা পুজো। এক সময় আশপাশের এলাকার দুর্গা পুজো না থাকায় অম্বিকানগর রাজ বাড়ির পুজো দেখতে ভীড় জমাতেন গোটা জঙ্গল মহলের মানুষ। গত দু দশকে এলাকায় বহু নতুন নতুন পুজো শুরু হয়েছে। কিন্তুু রাজ বাড়ির দুর্গা পুজোর জনপ্রিয়তা এখনও অটুটই থেকে গিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, রাজ পরিবারের পুজো হলেও পুজোর সমস্ত কাজকর্ম থেকে শুরু করে ঘট আনা সমস্ত কিছুতেই অংশগ্রহণ করেন এলাকার বাসিন্দারা। সন্ধিক্ষণে তোপ ধ্বনির মাধ্যমে সন্ধিপুজো শুরু হয়, আর সেই সন্ধিপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান এলাকার প্রচুর মানুষ ।