জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরাঃ- দুর্গাপুজোর আনন্দের অন্তরালে একরাশ বোবা কান্না কি লুকিয়ে আছে গুসকরাবাসী তথা পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের হৃদয়ে! খবরটা সামনে আসতেই হতাশার কালোমেঘ বিরাজ করতে শুরু করেছে গুসকরার আকাশে! পুজো মণ্ডপের সামনে, বিষয়বস্তু এক হলেও, দুটো আবেদন সম্বলিত বোর্ড দেখে হতাশা লুকিয়ে রাখতে পারেনি অনেকেই।
শুধু গুসকরাবাসী নয়, আট থেকে আশি, পাশ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানেন গুসকরা শহরের প্রাণকেন্দ্র হলো বারোয়ারি তলা। উত্তরে আছে মঞ্চ, সামনে মুক্ত প্রাঙ্গন। প্রায় ৭০ বছর ধরে এখানে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো সহ বিভিন্ন পুজো আয়োজিত হয়ে আসছে। মুক্ত প্রাঙ্গন প্রাতঃভ্রমণের জন্য ব্যবহার করেন প্রবীণ-প্রবীণরা। বাচ্চারা সেখানে খেলাধুলা করে। সেখানে ভলিবল প্রতিযোগিতা হয়।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এখানে নাটক, অঙ্কন, সঙ্গীত, নৃত্য সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। মহাপুরুষ ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্মদিন বা মৃত্যুদিন এখানে পালিত হয়।
এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখানে সভা করে থাকে। এককথায় জায়গাটির প্রতি এলাকাবাসীর একটা গভীর আবেগ জড়িয়ে আছে।
গুসকরা শহরের এক কৃতি মানুষ ছিলেন প্রয়াত উমাচরণ মণ্ডল। তাঁর আদি বাড়ি ছিল নওয়াদা গ্রামে। শুধু গুসকরা শহর নয়, শহরের বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় এই মানুষটির নিঃস্বার্থ অবদান অনস্বীকার্য।শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত স্থানটি (জে. এল. নং- ১৫৮ / ১১০, দাগ নঃ- ১৩৭৬ ও ১৩৭৭) অদূর ভবিষ্যতে শহরবাসী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজে যাতে ব্যবহার করতে পারে তারজন্য উমাচরণ বাবু সেটি মৌখিকভাবে দান করে যান। কালক্রমে সবার কাছে জায়গাটি বারোয়ারি তলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিটি গ্রাম বা শহরে এমন একটি জায়গা আছে সেটাই সবার কাছে এলাকাটির পরিচিতি এনে দেয়। গুসকরার ক্ষেত্রে বারোয়ারি তলা হলো সেই জায়গা।
বর্তমানে গুসকরা তথা পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের আবেগ জায়গাটিকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে আশঙ্কার কালো মেঘ। বোর্ড থেকে জানা যাচ্ছে – উমাচরণ বাবুর মৌখিক দানকে তাঁর মৃত্যুর দীর্ঘদিন পর (প্রায় ৫০ বছর) তাঁর পরিবারের বর্তমান সদস্যরা নাকি অস্বীকার করতে চাইছে। বিপুল অর্থের বিনিময়ে সেটি তুলে দিতে চাইছে কোনো এক প্রমোটারের হাতে। ভবিষ্যতে হয়তো সেই খোলামেলা জায়গায় গড়ে উঠবে এক বহুতল বাড়ি। এইভাবেই অপমৃত্যু ঘটবে এক আবেগের, ইতিহাসের।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরবাসীর মনে সৃষ্টি হয়েছে গভীর ক্ষোভের। বারোয়ারি তলায়, হয়তো শেষবারের মত, আয়োজিত দুর্গাপুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবীণ থেকে নবীন, পুজো কমিটির সদস্য, এমনকি সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকেই সংবাদ মাধ্যমের সামনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে ক্ষোভের সঙ্গে কিশোরী প্রিয়াঙ্কা বলল – শহর ও শহরবাসীর প্রতি কি এদের কোনো মায়া নাই? সবার প্রিয় জায়গাটি বিক্রি করতেই হবে? তার পাশে বসে থাকা অন্বেষা, অনন্যরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে।
অন্যদিকে শহরের বাসিন্দা হিসাবে কুশল মুখার্জ্জী বললেন- ছোট থেকেই জায়গাটিতে পুজো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলা করতে দেখেছি। আজ সবার প্রিয় জায়গাটিকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আশঙ্কা। শহরবাসী হিসাবে সবার কাছে আমার আবেদন – সবাই এগিয়ে আসুন, হাতে হাত মিলিয়ে এই ঘৃণ্য চক্রান্তকে রুখে দিই।
চেষ্টা করেও উমাচরণ বাবুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারার জন্য এই বিষয়ে তাদের মতামত জানা যায়নি।