সন্তোষ মন্ডল, আসানসোলঃ– ভূতের নাম শুনা মাত্রই কার না গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ভূতের ভয় পাই না এমন মানুষ মেলা ভার। তবে ভূতের ভয়কে উপেক্ষা করে ভিটে মাটি ছেড়ে অন্যত্র বসবাসকারী একটি গ্রামের সকল বাসিন্দায় আবার ফিরে আসেন তাদের গ্রামের কুলো দেবতা মাতা লক্ষ্মীর আরাধনা এই লক্ষ্মী পূজার দিনে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের কুলটি বিধানসভার অন্তর্গত বেনাগ্রাম। জনশ্রুতি আছে যে ওই গ্রামের মানুষেরা প্রায় ২৪ বছর আগে ওই গ্রামটি ত্যাগ করেছিলেন ভূতের আতঙ্কে। কিন্তু গ্রামের ভিটে মাটি ছেড়ে আসা ওই মানুষগুলি প্রতি বছর আবার এই কোজাগরি লক্ষ্মীপুজোর দিন তাদের কুলো দেবীকে পুজো দিতে একদিনের জন্য ফিরে আসেন গ্রামে।
সারা বছরটা যাই হোক না কেন, যে যেখানে থাকুন না কেন, দূর্গাপুজোর পরে কোজাগরী লক্ষর পুজোর দিন গ্রামে আসেন এখানকার বাসিন্দারা। গ্রামে লক্ষীপুজোতে আসেন পরিবারের সবাই। এই বছরেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। শনিবার সকালে বেনাগ্রামে গিয়ে দেখা গেলো কুলো দেবী লক্ষীর আরাধনা করতে চলে এসেছেন সবাই। তবে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে সবারই বাড়ি ঘর গুলো ভগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই প্রসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দা বদন মন্ডল ও সন্দীপ মাজি এদিন বলেন, “আমরা যখন এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাই তখন এখানে কিছু ছিলোনা। না রাস্তাঘাট, না বিদ্যুৎ, না পানীয়জল। সবাইকে এই ব্যাপারে বলা হয়েছিলো। এখন হয়তো একটুআধটু হয়েছে। কিন্তু আমরা সবাইতো ততদিনে অন্য জায়গায় নিজেদের মতো করে বাড়িঘর তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করে দিয়েছি। এই কোজাগরী লক্ষীপুজোর দিন সবাই আসি। ছেলেরা সকাল থেকে গ্রামে এসে পুজোর আয়োজন করি। মেয়েরা দুপুরের দিকে আসেন। এই বছরও তাই হয়েছে। বিকেল পাঁচটার সময় পুজো শুরু হয়েছে। পুজোর শেষে মেয়েরা প্রসাদ ভোগ খেয়ে বাড়ি চলে যাবে। আমরা রাতে কয়েকজন গ্রামে থেকে যাবো। এমনই রীতি চলে আসছে।”
সারা বছর ওই এলাকায় ভূতের আতঙ্ক থাকুক বা না থাকুক বেনাগ্রাম থাকে সম্পূর্ণ অন্ধকার ও জনমানবহীন । কিন্তু কোজাগরী লক্ষীপুজোর দিন এই “ভুতের গ্রাম”বেনা গ্রামটি হয়ে ওঠে মিলন মেলার আখড়া।