নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ- সোমবার দুপুরে প্রয়াত হলেন বাঁকুড়ার প্রাক্তন সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত ব্যাধিতে ভুগছিলেন তিনি। গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলচছিল প্রাক্তন সাংসদের । সেখানেই সোমবার দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। কিছুদিন আগে প্রয়াত হন তাঁর স্ত্রী।
পুরুলিয়ার আদ্রার বাসিন্দা হলেও বরাবর বাঁকুড়া থেকেই দলের হয়ে লড়াই করেছেন। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাঁকুড়ার সাংসদ ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই শারীরিক অসুস্থতার কারনে রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসেন। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে লড়াই না করলেও দলের হয়ে প্রচার করেন তিনি। নয় বারের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া বাঁকুড়ার মানুষের উন্নয়নের জন্য একাধিক কাজ করেছেন। সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ছিলেন রেলওয়ে স্ট্যাণ্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। লোকসভায় সিপিআই(এম)’র দলনেতা হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০০৪ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় লোকসভার অধ্যক্ষ নির্বাচিত হওয়ার পর বাসুদেব আচারিয়াকে লোকসভার দলনেতা নির্বাচিত করা হয় দলের পক্ষ থেকে। অংশ নিয়েছেন সংসদের বাইরের লড়াইয়ে। ইস্কোর আধুনিকীকরন সহ বার্নস্ট্যান্ডার্ড পুনরুজ্জীবন আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
বর্ষীয়ান এই নেতার প্রয়ানে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। শোক জানিয়েছেন পার্টি রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র।
অন্যদিকে এইবাংলায় ওয়েব পোর্টালের এডিটর ইন চিফ মনোজ সিং-ও বর্ষীয়ান এই নেতার প্রয়ানে শোক জ্ঞাপনের পাশাপাশি বাসুদেব আচারিয়ার সঙ্গে কাটানো তাঁর কিছু স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছেন। তাঁর শোক জ্ঞাপন ও স্মৃতি তাঁর কথাতেই তুলে ধরা হলঃ-
“সদ্য প্রয়াত মানুষ দরদী জননেতা বাসুদেব আচারিয়াকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। তিনি যখন সাংসদ পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তখন একটি সর্বভারতীয় হিন্দি নিউজ চ্যানেল আজতক-এর প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর সারাদিনের নির্বাচনী প্রচার কভারেজের জন্য আমি ছিলাম তাঁর সাথে তিন দিন, তিন রাত । আজ হঠাৎ তিনি প্রয়াত হওয়ায় পুরনো স্মৃতিগুলো আবার মনের মধ্যে জেগে উঠলো । বাঁকুড়ার ও পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তার সাথে নির্বাচনী প্রচার দেখেছি ও কভারেজ করেছি । মানুষের কাছে তিনি খুব সহজেই মিশে যেতে পারতেন, তাদের আপনজন হয়ে । আমি ওই কভারেজ করার সময় তাঁকে একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেছিলাম। সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বলেছিলেন বা সেই প্রশ্নের কথা আজ পর্যন্ত আমি কাউকে বলিনি । কিন্তু আজ সকলের কাছে তা বলতে খুব ইচ্ছে করছে তাই বলছি । আমার প্রশ্ন ছিল, তাঁর কাছে কি আর অন্য কোনো কোট নেই? ( একটি ব্রাউন হোয়াইট চেক চেক কোট ছাড়া )। তিনি প্রশ্নের উত্তরে হাসতে হাসতে বললেন, “ওই একটা কোটেই যখন কাজ হয়ে যাচ্ছে , তখন আর শুধু শুধু টাকা খরচা করে আড়ম্বরের কি প্রয়োজন রয়েছে। মানুষ তো আমাকে সাধারণভাবেই দেখতে চায়, আর আমিও সাধারণভাবেই বেঁচে থাকতে চাই।” আজকের দিনে তাঁর মতো মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন।”
ধন্য আমার বাংলা ভূমি তোমায় পেয়ে
হে বাসুদেব
ধন্য তোমার বাম রাজনীতির
শিক্ষা ও আদর্শ
লহ আমার শেষ প্রণাম