সংবাদদাতা,বাঁকুড়া:– বাঁকুড়া জেলার একাধিক গ্রামে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হল গরুর বিয়ে। বাংলার প্রচীন লোকসংস্কৃতিগুলির মধ্যে অন্যতম বাঁদনা পরবের এমনই রীতি। আসলে বাঁদনা পরব হল হল গরুর বন্দনা বা গরুর সেবা। একটি কৃষিভিত্তিক উৎসব। আমন ধান চাষের শেষে গরুদের বন্দনা করে কৃতজ্ঞতা জানানোর রীতি। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে ‘বন্দনা বা বন্ধন’ থেকে ‘বাঁদনা’ বা ‘বাঁধনা’ শব্দের উৎপত্তি। প্রতি বছর কার্তিক অমাবস্যার রাত বা কালীপুজোর রাত থেকে শুরু হওয়া বাঁদনা পরব শেষ হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন। কালীপুজোর পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদে চলে গো-বন্দনা। আর দ্বিতীয়ায় ‘গোরু খুঁটা’ উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এই পরব। মূলত ঝাড়খণ্ড এবং বাংলার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার কুড়মি, ভূমিজ, লোধা, মাহাতো প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা এই বাঁদনা উৎসব পালন করেন।
সকাল সকাল গরুদের স্নান করিয়ে গায়ে বিভিন্ন রঙ দিয়ে ছাপ দিয়ে সাজানো হয়। পায়ে জল ঢেলে সেই জল গামছা দিয়ে মোছানো হয় পা। এরপর গরুর পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে,মাথা আঁচুরে দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। বিয়ের পর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।
কালীপুজোর পর দিন মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলার আকুই, শাহসপুর, সিমুলিয়া, মঙ্গল পুর, নাড়রা দশরথবাটি এলাকার বাড়িতে বাড়িতে এই গরুর বিয়ে উপলক্ষ্যে মেতে উঠেছিল সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে বুধবার সকাল থেকে ‘গোরু খুঁটা’ উৎসবে সামিল হয়েছেন জেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। এই উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য একটি গোরুকে গ্রামের শেষ প্রান্তে শক্ত খুঁটিতে দড়িতে বাঁধা হয়। পরে ধামসা-মাদল সহ অন্যান্য আদিবাসী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কোন মৃত পশুর শুকনো চামড়া দিয়ে ঐ গোরু বা মহিষটিকে কসরত করানো হয়। আর এভাবেই আনন্দোৎসবে মেতে ওঠেন আদিবাসী সমাজের মানুষ।