সন্তোষ মণ্ডল,আসানসোলঃ– বেসরকারি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় গরম লোহার লেডেল উল্টে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের, জখম আরও ৬জন। মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের জামুড়িয়া শিল্প তালুকে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। অভিযোগ ওই কারখানায় মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পরে কারখানার শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠে গেল। যা নিয়ে সরব হয়েছে শাসক তৃণমূলের পাশাপাশি দুই বিরোধী দল বিজেপি ও সিপিএম।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত্রি প্রায় এগারোটা নাগাদ কারখানার লোহা গলানোর ভাট্টির মধ্যে থাকা লেডেল থেকে গলন্ত লোহা উপচে পড়ে আহত হয় ৬ জন শ্রমিক। বিষয়টি লক্ষ্য করেই সংলগ্ন অংশে থাকা অন্য সকল শ্রমিক কারখানা কর্তৃপক্ষকে খবর দেয় ও জখম শ্রমিকদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বিহারের জামুই জেলার গাঙটির বাসিন্দা শিফট ইনচার্জ ধর্মেন্দ্র মিশ্র, উত্তর প্রদেশের বালিয়ার বালুপুরের বাসিন্দা দেবেন্দ্র কুমার যাদব, বিহারের সিবানের বাসিন্দা রাম রতন রাম ও রানীগঞ্জের ইস্ট কলেজ পাড়ার বাসিন্দা বিবেক কুমার গন্ড, বিহারের বাঁকা জেলার ভাগপুরের বাসিন্দা পাপ্পু যাদবকে রানীগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পাপ্পু যাদবের জখম গুরুতর হওয়ায় তাকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জামুড়িয়া থানার জামুড়িয়া হাটতলার বাসিন্দা বছর ৫৪-এর শ্রমিক কিশোর কেশরীর।
এদিকে, ঘটনার খবর জানাজানি হওয়ার পর শুক্রবার সকাল থেকে কারখানা চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে এদিন কারখানায় পৌঁছন তৃণমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জেলা আইএনটিটিইউসির সভাপতি তথা আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র অভিজিৎ ঘটক, জেলা তৃণমুল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রেমপাল সিং, আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও সিপিএম নেতা তাপস কবি। গোটা পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানা চত্বরে জামুড়িয়া থানার ওসি রাজশেখর মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী।
অন্যদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষেকর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন শাসক দলেরা নেতা বিধায়করা। পাশাপাশি সিপিএমের তরফে কারখানা কর্তৃপক্ষকে দাবি সম্বলিত একটা স্মারক লিপিও দেওয়া হয়। পরে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও অভিজিৎ ঘটক বলেন, “আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। মৃত কর্মীকে ১৫ লক্ষ টাকা ও আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি পূরণ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক সংগঠন জেলা ও ব্লক নেতৃত্ব বৈঠক করবে। কর্মীদের তরফে কারখানায় নিরাপত্তা নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে তাও কারখানা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।”
অন্যদিকে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও সিপিএম নেতা তাপস কবি বলেন, “এই কারখানা বিরুদ্ধে আগে থেকেই অনেক অভিযোগ আছে। এখানে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নেই। আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষকে সব বলেছি।”