শুভ্রাচল চৌধুরী,খাতড়াঃ- স্ত্রী, পুত্র বৌমা আর নাতিকে নিয়ে অভাবের সংসার সিমলাপালের কানাকাটা গ্রামের বছর আশির নজর আলি খাঁয়ের। কিন্তু জলজ্যান্ত মানুষটা এখনো দিব্যি হেঁটে, চলে বেড়ালেও বিগত ২০২০ সাল থেকে সরকারী কাগজে কলমে ‘মৃত’। ফলে ওই বছর থেকেই বন্ধ বার্ধক্যভাতাও। এমনটাই দাবি নজর আলি খাঁ ও তাঁর পরিবার সদস্যদের।
এরপর অশক্ত শরীরেও নিজেকে ‘জীবিত’ প্রমাণে সরকারি অফিসের দোরে দোরে ঘোরেন নজর আলি খাঁ। কিন্তু এখনও সরকারি খাতায় তিনি ‘মৃত’! ফলে বিগত তিন বছরেরও বেশী সময়ককালে নিজেকে ‘জীবিত’ প্রমাণ করতে না পারায় এখনো চালু হয়নি বার্ধক্য ভাতা। ফলে পূরাণো দিনের এক প্রকার ভগ্নপ্রায় বাড়িতেই দিন কাটছে অসহায় নজর আলি খাঁয়ের। তাঁর পরিবার সূত্রে বলা হয়েছে, ‘অনেকের কাছে সরকারী প্রকল্পের ওই সামান্য টাকার হয়তো তেমন কোনও মূল্য নাও থাকতে পারে। তবে তাদের কাছে এই টাকার মূল্য অনেক, দাবি বৃদ্ধ নজর আলি খাঁ ও তাঁর পরিবারের।
একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষ কীভাবে সরকারি খাতায় ‘মৃত’ হলেন? এই প্রশ্নই যখন ঘোরাফেরা করছে, ঠিক তখনই শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই পরস্পরের দিকে কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত। সিপিআইএম সিমলাপাল এরিয়া কমিটির সদস্য কৌশিক পাইন এবিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারটাই গাফিলতিতে ভরা। তাঁদের জানা সিমলাপালে এক খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের আধিকারিক জীবিত থাকা সত্বেও তাঁর স্ত্রী বিধবা ভাতা পান, আবার এখানে এমন ছেলেও আছে যে বিধবা ভাতা পাচ্ছে। ভোট পাওয়ার আশায় নথি যাচাই না করেই এসব করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। একই সঙ্গে সরকারী কাগজে কলমে ‘মৃত’ নজর আলি খাঁ ‘জীবিত’ প্রমাণে তাঁরাও সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সম্পাদক রামানুজ সিংহমহাপাত্র বিরোধীদের ‘ছিদ্রান্বেষী’ দাবি করে বলেন, ওঁদের জন সংযোগ নেই, কোথায় একটা ভুল পেয়েছে সেটা নিয়েই পড়ে অছে। বৃদ্ধ নজর আলি খাঁয়ের বিষয়টি তাঁদের জানা আছে ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
সিমলাপালের বিডিও মানস চক্রবর্ত্তীকে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উনি আমার কাছে এসেছিলেন, কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়িই বৃদ্ধ নজর আলি খাঁয়ের ফের বার্ধক্য ভাতা চালু হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।