টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে একই ধরনের কনসেপ্টের রিপিটেশন দেখতে দেখতেই নতুন কিছু লেখার জন্য তিনি কলম ধরেছিলেন। তাই প্রচলিত ট্রেন্ডে গা না ভাসিয়ে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ভিন্ন ধারার গল্প, কখনো লিখেছেন সুইমারের গল্প কখনও বা মূকবধিরদের জীবন, কখনো তার কলমে ফুটে উঠেছে স্বর্ণকারদের জীবন। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, কথা হচ্ছে, ব্লুজ প্রোডাকশন হাউজের কর্ণধার স্নেহাশীষ চক্রবর্তীকে নিয়ে। ছোট পর্দায় একাধিক নতুন মুখদের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি গল্পের মধ্যেও যিনি অভিনবত্বকে তুলে ধরেছেন বারংবার। দর্শকও সেই নতুনত্বকে অনুভব করে তার প্রতিটি গল্পকেই আপন করে নিয়েছে আর এই কারণেই হয়ত তিনি যত বেশি জনপ্রিয়তার মুখোমুখি হয়েছেন ততখানি সমালোচিত হতে হয়েছে তাকে। সম্প্রতি জি বাংলায় ব্লুজের যোগমায়া ধারাবাহিকের প্রোমো টেলিকাস্ট হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে এক নতুন বিতর্ক, সেই বিতর্ক নিয়েই আমাদের প্রতিনিধি সঙ্গীতা চৌধুরীর সামনে মুখ খুললেন ব্লুজের কর্ণধার স্নেহাশীষ চক্রবর্তী।
সঙ্গীতা চৌধুরী: – সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যান পেজগুলোতে কেউ কেউ লিখছেন,ব্লুজের ঘুরেফিরে সেই একই গল্প! কেউ পুলিশ,কেউ উকিল,কেউ নায়িকা এখন আবার আই এ এস! সেই একই টপিকের রিপিট!যোগমায়া আসতে আসতেই এই নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন কন্ট্রোভার্সি! এই নিয়ে কী বলবেন?
স্নেহাশীষ চক্রবর্তী:— যারা এই বিতর্কগুলো করছেন, তাদের বক্তব্যগুলোকে প্রশংসা করছি। তবে আমি বলবো ২৫ বছর ধরে বাঙালী এবং ভারতবর্ষ দেখেছেন শাশুড়ি বৌমার কুটকাচালি, তখন কিন্তু দর্শকের মনে কোথাও রিপিটেশন লাগে নি। তারপর একজন অন্যরকম নায়িকা এলেন, যিনি জিন্স পরেন শার্ট পরেন, তিনি বাড়ির বউ প্লাস একজন ইন্টেলিজেন্স অফিসার। সে হলো জগদ্ধাত্রী আর এই সিরিয়ালটা ভারতবর্ষের তিনটি ভাষায় ডাবিং হওয়া ছাড়াও বঙ্গ সেরা হচ্ছে, অর্থাৎ এখান থেকেই বোঝা যায় যে, দর্শক অন্য রুচির জিনিস চাইছেন, দর্শক বিষয়টাকে প্রশংসা করছেন কারণ শাশুড়ি বৌমার গল্প, অবৈধ সম্পর্ক এই সমস্ত কিছুর বাইরে গিয়ে একটা নতুন ঘটনা যেটা লোককে সত্যি আনন্দ দিয়েছে।
এরপর যদি গীতা এলএলবির কথা বলি। ফারাক টা দেখুন, জগদ্ধাত্রী কিন্তু একটা শহুরে এলাকার মেয়ে, তার লড়াইয়ের গল্প। সে একটা ইন্টেলিজেন্স অফিসার আর গীতা হচ্ছে একটা প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে যার বাবা কে ঘুষখোর বলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো, সেখান থেকে দাঁড়িয়ে সে উকিল হয়ে লড়াই করছে। গীতার আরো একটা প্রবলেম আছে, যেটা পরবর্তীকালে রিভেল হবে। গীতা ধারাবাহিকটিও দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছে। কারণ অন্যান্য প্যারামিটারে দেখা যাচ্ছে যে, গীতা এলএলবি কিন্তু চ্যানেল টপার। তার মানে দর্শক এটাকেও প্রশংসা করেছেন আর এখানে গল্পটা হচ্ছে একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি হয়েছে, অথচ তার পাশে কেউ নেই,এই সময় একটা সাধারণ গরীব উকিল, যে নিজেই ভালোমতো খেতে পায় না, সে দাঁড়িয়েছে তার পাশে। গীতার সাথে জগদ্ধাত্রীর হাজার মাইলের মধ্যে কোনো মিল নেই।
এইবার আসছি আমার তিন নম্বর গল্প যোগমায়া নিয়ে, আমি বেশ কয়েক বছর আগে পত্রিকায় একটি ছবি দেখি যে, একটি মেয়ে রিকশার সিটে একজন লোককে বসিয়ে রিকশা চালাচ্ছে, সেই মেয়েটি আসলে ইউ পি এস সি ক্র্যাক করেছে,তাই সে তার রিকশাচালক বাবাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য বাবাকে সিটে বসিয়ে রিকশা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এই চিত্রটা আমার মাথায় ছিলো, তো সেখান থেকেই একটা বস্তি লেভেলের একটা মেয়ের স্বপ্ন দেখার লড়াই আমি তুলে ধরেছি যোগমায়াতে। সে আই এ এস হয়ে উঠবে কি উঠবে না, সমাজের যে যে জায়গায় কোরাপশন আছে, সেই গুলোকে সে মিট করতে করতে যাবে আর যখন সে পাওয়ার পাবে, সেগুলোর সুরাহা করবে- তো তিনটি গল্পের মধ্যে মিল কোথায়? একটা মেয়ের শ্লীলতাহানি হয়েছে তাকে বাঁচানোর গল্প আর একটা ইন্টেলিজেন্স অফিসার যে সারাক্ষণ এই কাজটাই করে আর একটা হলো বাস্তবধর্মী ঘটনা। আমি তো জানি না, সেই রিক্সা চালক মেয়েটির কীরকম স্ট্রাগল হয়েছিলো, তবে আমি একটা স্ট্রাগল ধরে নিয়েই যোগমায়া গল্পটা লিখেছি। এখন যদি কেউ মনে করেন আমি গল্প রিপিট করছি, তাহলে বলতে হয় তিনি গল্প বোঝেন না। কারন তিনটে কনটেন্টই তো আলাদা।