eaibanglai
Homeএই বাংলায়শিল্পাঞ্চলে নতুন কায়দায় মোবাইল ফোনে প্রতারণা, আতঙ্কে অভিভাবকরা

শিল্পাঞ্চলে নতুন কায়দায় মোবাইল ফোনে প্রতারণা, আতঙ্কে অভিভাবকরা

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:– গত কয়েক বছর ধরে স্মার্টফোন ব্যবহার করে একাধিক প্রতারণার কাহিনী শোনা যায় গোটা দেশজুড়ে। প্রতারকদের হাতে নিজের কষ্ট অর্জিত অর্থ হারিয়ে বহু মানুষ এখন অসহায় জীবনযাপন করছেন। স্মার্টফোনের ব্যবহারকারী একাধিক ব্যক্তি এই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা খুইয়েছেন বহুবার। শিল্পাঞ্চলের পাশেই ঝাড়খন্ডে থাকা জামতরা গেং নাকি এইসব অপকর্মের পেছনে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রতারকরা নিত্য নতুন কায়দায় মানুষকে প্রতারণা করে চলেছে দিনের পর দিন। পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিক জায়গায় সাইবার সচেতনতা শিবির আয়োজন করে মানুষ যাতে এই প্রতারকদের হাতে প্রতারিত না তার চেষ্টা নিরন্তর করে যাচ্ছে। তবে পুলিশের হাজার চেষ্টার পরেও প্রতারকরা নিত্যনতুন কায়দায় প্রতারণার ছক কোষে প্রতারণার বহু মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বস্বান্ত করছে বলে অভিযোগ। পুলিশের সমস্ত চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছে প্রতারকদের এই নিত্যনতুন কায়দায় প্রতারণার ছকে ।

এবার শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে স্মার্টফোন ব্যবহার করে এক নতুন কায়দায় প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই শিল্পাঞ্চলের বহু মানুষ এই প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে বেশ কয়েক হাজার টাকা খুইয়েছেন। নতুন এই প্রতারণার কায়দা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে মানুষ সহজেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বেনাচিতির বাসিন্দা সঞ্জীব কান্তি দাসের সাথেও এমনই এক ঘটনা ঘটে শুক্রবার দুপুরে। সঞ্জীব বাবু জানিয়েছেন শুক্রবার দুপুরে তার স্মার্টফোনের হোয়াটসঅ্যাপে একটি কল আসে। তিনি কলটি রিসিভ করার সাথে সাথেই ওপার থেকে নিজেকে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে জানান যে তার মেয়েকে একটি মার্ডার কেসে চার যুবকের সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্ভবতই একথা শোনার সাথে সাথেই সঞ্জীব বাবুর মাথায় যেন বজ্রাঘাত পড়ে যায়। কারণ তার মেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লির একটি নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তিনি ওই পুলিশ আধিকারিককে প্রশ্ন করেন যে তিনি যে মেয়েটির কথা বলছেন তার নাম কি। ওপার থেকে পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই প্রতারক তার মেয়ের নাম সঠিক বলে এবং তার মেয়েকে মারধর করা হচ্ছে এমন আওয়াজ শোনান। একটি মেয়ের কান্নার আওয়াজ শোনা যায় ওপার থেকে বলে সঞ্জীববাবু জানান। কান্নার আওয়াজ শুনে এক পলকের জন্য তার মনে হয় যে তার নিজের মেয়ের মতন ওই গলাটা লাগছে। তিনি তৎক্ষণাৎ ওই প্রতারক পুলিশ আধিকারিক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিকে বলেন তার মেয়ে এ ধরনের কাজ করতে পারেন না । তখন ওপার থেকে পুলিশ আধিকারিক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি সঞ্জীব বাবুর হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কয়েকটি ছবি পাঠান। সঞ্জীব বাবু জানান ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে এক ব্যক্তিকে বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সঞ্জীব বাবু জানতে চান তার মেয়ের ছবি কোথায়। তখন ওই প্রতারক ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিয়ে সঞ্জীব বাবুকে বলেন যদি নিজের মেয়েকে মার্ডার কেসের হাত থেকে বাঁচাতে চান তাহলে এক্ষুনি পঞ্চাশ হাজার টাকা তাদের দেওয়া একটি একাউন্টে পাঠিয়ে দিতে হবে।

এই ঘটনা চলাকালীন সৌভাগ্যবশত সঞ্জীব বাবুর মেয়ে দিল্লি থেকে তার মায়ের ফোনে কল করেন। সঞ্জীব বাবুর স্ত্রী মেয়েকে তার বাবার সাথে ওই প্রতারকের কি কথা হচ্ছে জানিয়ে সব খুলে বলেন। তখনই সঞ্জীব বাবু বুঝতে পারেন তাকে প্রতারণা করার চেষ্টা হচ্ছে এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলটি ডিসকানেক্ট করে দেন। এরপর সঞ্জীববাবু দুর্গাপুর সাইবার বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন ইতিমধ্যেই তাদের কাছে নাকি দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের একাধিক ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক যাদের ছেলে মেয়ে রা শিল্পাঞ্চলের বাইরে পড়াশোনা করেন তাদের সবাইকে এই ভাবেই প্রতারণা করা হয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র মারফত জানা গেছে হোয়াটসঅ্যাপে কলিং এর মাধ্যমে যে নাম্বারগুলি থেকে ফোন আসছে তা সকল নাম্বারই ভুয়ো পরিচয় দিয়ে নেওয়া। পুলিশের দক্ষ সাইবার বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে। শুধু সঞ্জীব বাবু একা নন। দুর্গাপুরের আরেক ব্যক্তি কিংশুক গুপ্ত কে ঠিক একইভাবে প্রতারণা করার চেষ্টা হয়েছে বলে কিংশুক বাবু জানিয়েছেন। সেই কথা রেকর্ড করে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেছেন যাতে আর কেউ এই প্রতারকদের ফাঁদে পা না দিয়ে নিজের কষ্ট অর্জিত অর্থ খুইয়ে বসেন।

চ্যানেল ‘এই বাংলায়’ পক্ষ থেকে শিল্পাঞ্চলের সকল অভিভাবকদের কাছে এহেন হাত থেকে বাঁচতে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে অনুরোধ করা হচ্ছে। যদি কোন ভাবে কারো কাছে এ ধরনের হোয়াটসঅ্যাপে কলিং আসে তাহলে অবিলম্বে স্থানীয় পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধ রইল।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments