দলীয় কোঁদলে ভূমিপুত্র নেতাকে টিকিট দেয়নি কোন দল
[ বর্ধমান – দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বীরূপাক্ষ সেন ]
উনিশের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর আসনে জিতে রাজ্য সভাপতির মন্ত্রী সভায় ঠাঁই হবার কথা ছিল। দলীয় সহকর্মীদের মধ্যে এনিয়ে উদ্দীপনা অস্বীকার করার ছিল না । কিন্তু, অনতিবিলম্বে রাজ্য সভাপতি পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ডঃ সুকান্ত মজুমদার। আর শুভেন্দু অধিকারী এরাজ্যে শাসক বিরোধী দলের মুখ হিসেবে উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন ক্রমশঃ জটিল হয়ে ওঠে দলের।
কিছু বিষয়ে ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়া ও আলটপকা মন্তব্যের জেরে ধীরে কোনঠাসা এমনকি দায়িত্ব মুক্তি ঘটে দিলীপের। অধুনা প্রাক্তন জেলা সভাপতি ও বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের আবদারে কয়লা, বালির কারবারিদের ঢাক ঢোল পিটিয়ে দলে যোগদান করিয়ে দুর্গাপুরে প্রথমবার দলীয় রাজনীতির সর্বনাশ করে ফেলেন দিলীপ। তার শিষ্য ভক্তরা এতে লাভবান হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নজর এড়িয়ে যায়নি কিছুই। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারক হিসেবে যে ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্যদিয়ে জীবন যাপন করেছেন, পরবর্তীতে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে পরিচ্ছন্ন লড়াকু নেতৃত্বের ইমেজ শিষ্য – ভক্তদের পাল্লায় পড়ে অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন করেছে, একথা দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরাও স্বীকার করেন। আইপ্যাকের সহযোগিতায় শাসক দলের রাজনৈতিক অভিসন্ধি খুব কম সময়ের মধ্যে একপর্যায়ে জব্দ করে ফেলে লড়াইয়ের ইমেজ। সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে প্রাদেশিক নেতৃত্বের শিখরে পৌঁছে যে সাবধানতার প্রয়োজন ছিল, সেক্ষেত্রে অসতর্কতা দিলীপের সর্বনাশের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। যদিও পরবর্তীতে সম্যক উপলব্ধি বশতঃ অনেক ধৈর্য ও সহনশীলতার দরুন বিশ্বাস যোগ্যতা নষ্ট হয়নি।
মেদিনীপুরের জেতা আসনে এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে প্রত্যাশা নিয়েই নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তোলা। দলীয় পর্যবেক্ষণ ছিল মোতাবেক ,হাতের তালুতে চেনা জেলাস্তরের সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পছন্দ অনুযায়ী দিলীপ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন দুর্গাপুর- বর্ধমান আসনে। দেশ জুড়ে চারশো, আর বাংলায় কমপক্ষে পঁচিশ- ত্রিশটি আসনে জেতার লক্ষমাত্রা বিজেপি-র। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হবার ঠিক চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই দিলীপ ঘোষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত দুর্গাপুর -বর্ধমান লোকসভা ক্ষেত্রের দলীয় কার্যকর্তারা। জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা লোকসভা এলাকায় সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছেন তপশিলী সংগঠন করে উঠে আসা সুমন্ত মন্ডলকে। সঙ্গে থাকছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক দুর্গাপুর নিবাসী অভিজিত দত্ত। এখানে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম জোট পদ প্রার্থী তাদের দুর্বল সাংগঠনিক ভিতের উপর স্রেফ দলীয় পরিচয় বাঁচিয়ে রাখতে মরিয়া। প্রাক নির্বাচনী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পর্যবেক্ষকদের তেমনি ধারনা। এই মুহূর্তে নির্বাচনী লড়াই হবে এখানে প্রধান যে দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে তারা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) প্রার্থী।
দুর্নীতির দায়ে কোনঠাসা শাসক দলের দুর্দিনে মোদী ম্যাজিক এগিয়ে রেখেছে এই জেতা আসনে বিজেপিকে। তবে শিল্পাঞ্চলে সাংগঠনিক বনিয়াদ সময়ের প্রয়োজনে যতোটা শক্তিশালী হবার কথা, ততোটাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার কিছু অভিযোগ। দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণের হাতে দিলীপের ভাগ্য ঝুলে থাকছে। শিষ্যকে কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন দিলীপ, সেটা তার রাজনৈতিক দক্ষতার উপরেই নির্ভর করছে। কারণ, জেলার সংগঠনে অর্ধেকের বেশি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এই মুহূর্তে তার বিশ্বাস যোগ্যতাই তলানিতে। একান্ত আলাপচারিতায় দলের একটি অংশ তেমনি উল্লেখ করেন। যদিও তাদের বিশ্বাস, শাসক দলের সাংগঠনিক কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়ায় এবারো নির্বাচনে বিজেপিকে ততোখানি বেগ পেতে হবে না, ঠিক যে পরিস্থিতিতে সদ্য প্রাক্তন সাংসদ সুরিন্দর সিং আহলুয়ালিয়াকে জিতে আসতে হয়েছিল। শাসক কিম্বা বিরোধী, লোকসভার টিকিট দেয়নি এখানকার বিধায়ক থেকে জেলা সভাপতি পর্যন্ত কোন ভূমিপুত্র নেতাকে। উপদলীয় সমস্যাই প্রধান কারণ বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার জেতা আসনে কোন কারণে বিপক্ষের কাছে ধরাশায়ী হলে দিলীপের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। তাই যদিও শেষ পর্যন্ত এই আসনের নির্বাচক মন্ডলীর সৌভাগ্য হচ্ছে না এবারেও, ভূমিপুত্রকে সাংসদ হিসেবে পাবার।