স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: তিনি বলেই ছিলেন, তিনি করেই ছাড়লেন। এটায় আজকের দিনে কবির জয়!
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ‘ব্লু আইএড বয়’ দূর্গাপুরের হোটেল ব্যবসায়ী কবি দত্ত শেষপর্যন্ত বসেই পড়লেন চেয়ারম্যানের আসনে। এই নিয়ে দারুন উল্লাস দুর্গাপুরের শিল্প বাণিজ্য মহলে আর বিস্ময় নগরের জনজীবনে। অবশ্য, গত চার বছরে শহর দুর্গাপুর ঠাহর করেছে ব্যবসায়ী কবির তরতর করে আরোও আরোও উন্নতির সোপান বেয়ে এই নির্বিঘ্নে ভেসে চলা। তাই, মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছাপিয়ে কবির এই নতুন উত্তরণকে ঘিরে জনমানসে সেভাবে প্রতিক্রিয়া ছড়ায়নি এদিন রাত্রি পর্যন্ত।
শুক্রবার দুপুরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিবের পাঠানো একটি নির্দেশে কবিকে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্হার চেয়ারম্যানের পদে বসানোর কথা বলা হয়েছে। এতদিন তিনি ছিলেন ওই সংস্হার ভাইস চেয়ারম্যান। দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে প্রায় আচমকাই তিন বছর আগে মূখ্যমন্ত্রী কবিকে ওই পদে বসিয়েছিলেন সকলকে অবাক করে দিয়ে। আজ সেই কবিকেই এবার উঠিয়ে আনা হয়েছে সংস্হার শিখরে। আর তার এই উত্তরণের জন্য পদ খালি করতে হয়েছে রাণীগঞ্জ এর বিধায়ক বর্ষীয়ান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই তাপসের সাথেই গত তিন বছরে প্রায় রোজই কবির খিটিরমিটি লেগেই ছিল। একসময় ক্ষুব্ধ কবি দপ্তরে আসাই বন্ধ করে দেন। ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, ‘এভাবে কি আর কাজ করব?’ জানা যায় ,তখনই তিনি নাকি জানিয়ে দেন, ‘চেয়ারম্যান হলে তবেই এই অফিসে ফিরে আসবো।’ আজ তার সেই জেদ পূরণ হলো।
একসময় তাকে কার্যত হেনস্থা করা হচ্ছে বলে তিনি রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে কয়েকদফা অভিযোগও করেন, বলে বিশেষ সূত্রে জানা যায়। তারপর, আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার দপ্তরে আগুন লাগার দিনও দপ্তরে না এসে শিলিগুড়ি থেকে তিনি সটান পৌঁছে যান ফিরহাদের দপ্তরে।
সেই কবিই এবার বসলেন চেয়ারম্যানের পদে। তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে এদিন তিনি যেমন মুখ খোলেননি , তেমন মুখ বন্ধ তাপসের ও । এই তাপস সম্পর্কে বিজেপির নেতা, প্রাক্তন সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুয়ালিয়ার শ্যালক। গত ২০১৯ এর লোকসভার ভোটে বর্ধমান দুর্গাপুর আসনে তিনি অবিশ্বাস্য ভাবে জিতে গেলে তাপস আর তার ভাই জহর ব্যানার্জি তৃণমুল কংগ্রেসকে ঠকিয়ে জামাইবাবুকে জেতাতে জান লড়িয়ে ছিলেন, বলে রোটে যায়। এবার সেই আলুয়ালিয়াকে বিজেপি আসানসোলের আসনে প্রার্থী করায় তিনি হেরে যান বটে, তবে, বেশি ভোট পান কুলটি আর রাণীগঞ্জ বিধানসভা এলাকায়। তাপস কিন্তু এই রানীগঞ্জেরই বিধায়ক। টিএমসি প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা জিতলেও, ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, আসলে, তাপসকে পদ থেকে সরিয়ে তৃণমুল কংগ্রেস তাকে ব্যর্থতা বা আত্মঘাতী কোনো গোলের দরুন শাস্তি দিলো। তবে কি তাপস গাদ্দার? আর এই মৌকায় ঝটিতে কপাল খুলে গেলো দুর্গাপুরের কবির। ভোটের সময় বরাবরের মতো এবারও লাগাতার ১৬ দিন কবির সেই হোটেলে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী নাকি তার তীক্ষ্ম নজর রেখেছিলেন আসানসোলের তার দুই পুরোনো সৈনিক তাপস আর মন্ত্রী মলয় ঘটকের কাজকর্মের ওপর। আসানসোলের কপালে কি এবার তবে আরো দুঃখ লেখা আছে? এই ঝড়ে মরবে আরো কোনো বুড়ো বক? ওদিকে, জানা যায়, শহরের বিধাননগরের এক ভারী সিপিএম নেতাকে টিএমসি তে যোগদান করানোর প্রতিশ্রুতিও নাকি কবি দিয়েছেন দলের কাছে। কবির সাথে ঘরের লোকের সম্পর্ক সিপিএমের নেতাদের তিন দশক ধরেই। এই যোগদান সম্ভব না হলে ফের কি তবে চাপে পড়তে হবে কবিকে?