eaibanglai
Homeএই বাংলায়বালক মেরে ৫০ লাখ গচ্ছা কোল মাফিয়ার হাসপাতালে

বালক মেরে ৫০ লাখ গচ্ছা কোল মাফিয়ার হাসপাতালে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: ভুল চিকিৎসাতেই এক বালককে তারা মেরে ফেলেছে, বলে স্বীকারই করে নিল দুর্গাপুরের একটি হাসপাতাল। শুধু তাইই নয়, দোষ ঢাকতে গুনাগার হিসেবে তারা মৃত ওই বালকের জীবনের দামও ধার্য করে দিলো আধ কোটি টাকা, যা নিয়ে শনিবার চাঞ্চল্য ছড়ালো শহরের স্বাস্থ্য পরিসেবা মহলেও।

শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর ধীরে ধীরে মেডিকেল হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, ঠিক যেমন প্রদীপের তলায় অন্ধকার, তেমনি ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল নাম নিয়ে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক হাতুড়ে চিকিৎসা কেন্দ্র। যার জেরে প্রদীপের আগুনে পড়া পতঙ্গের মতো দশা এখন রোগী, রোগীর পরিবারের। মরণ জেনেও ছুটছে ওইসব তথাকথিত হাসপাতালেই। শিল্পাঞ্চলে তাই পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে হাসপাতাল পরিষেবার ফলাও ব্যবসা। গত এক দশক ধরে চিকিৎসায় গাফিলতির দরুন রোগী মৃত্যুর সংখ্যাটাও চোখে পড়ার মতো। এর বেশির ভাগেরই তাৎক্ষণিক অভিযোগ হয়, গোলমাল, উত্তেজনা হয় আর তারপরেই একশ্রেণীর দালালের মাধ্যমে ভেতর ভেতর সব নাকি সেটিং হয়ে যায়। আরো অভিযোগ, তদন্তে আসা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও ক্ষেত্র বিশেষে অজ্ঞাত কারণে হঠাতই চুপ করে যান। অভিযোগ, মিষ্টি মধুর যোগেই নাকি ধামাচাপা পড়ে জীবন – মৃত্যুর খতিয়ান। এরই ফোগল গোলে শহর দুর্গাপুরের বিভিন্ন পাড়ায় বাহুবলী হাসপাতাল মাফিয়া গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে চুপিসারে, যারা রোগীদের ধমকাতে চমকাতে ক্যাবারে পাড়ার মতো বাউন্সারও পোষে লজ্জার মাথা খেয়ে। আবার, বেকায়দায় পড়ে, বেগতিক বুঝে সময়ে সময়ে ওইসব হাসপাতাল কোনো কোনো মৃত্যুর পর বন্ধ দরজার আড়ালে গোপন সওদা করে মামলা রফাদফা করে। আর পকেটে মাল পেয়ে মুখে কুলুপ এঁটে কেটে পড়েন রোগীর পরিজনেরা।

কিন্তু, শনিবার হলো উলটপুরান। এই প্রথম দুর্গাপুরের চিকিৎসা পরিষেবার ইতিহাসে রোগী মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার লিখিত অঙ্গীকার করতে বাধ্য হলো দুর্গাপুরের সিটিসেন্টারের লাইফ কেয়ার নামে নতুন গজিয়ে ওঠা একটি বেসরকারী হাসপাতাল। যা নিয়ে আলোড়ন ছড়াল সর্বস্তরে।

এদিন লাইফ কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক চুক্তিপত্রে জানাচ্ছে – যে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের সমস্ত নথি যা হাসপাতালে রয়েছে তা পুলিশ প্রশাসনকে তদন্তের সহযোগিতার জন্য তুলে দেওয়া হবে। পাশাপশি, মৃতের পরিজনদের দাবি মতো বালকের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা তারা দিতে সম্মত হয়েছেন। ওই হাসপাতালের তরফে মেডিকেল সুপার ড: সুবোধ সিং, মুখ্য কার্যনির্বাহী শতদল দত্ত যদিও বার বার অনুরোধ করেন ওই টাকার অংকটি কিছুটা কমিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, মৃত রোগী সোম রুইদাসের পরিজনদের পক্ষে বিশ্বনাথ রুইদাস, সুশান্ত আগস্তি কিন্তু তাদের দাবি মত ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ থেকে একচুলও নড়েননি। অবশেষে, লাইফ কেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ৫০ লক্ষ টাকার একটি চেক মৃতের পরিজনকে তুলে দেওয়া হবে আগামী ৩ জুলাই এর মধ্যে, বলে অঙ্গীকার করতে বাধ্য হন। এই হাসপাতালের পরিসেবা নিয়ে সময়ে সময়ে নানান অভিযোগ ওঠে। দক্ষ চিকিৎসক না থাকা সত্ত্বেও রোগী জোর করে ফেলে রেখে উপার্জন করা, আরোও কয়েকটি হাসপাতালের মতোই সরকারি আদেশ সত্ত্বেও স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করার মতো অভিযোগ প্রায়শই ওঠে। ওই হাসপাতালের মালিকানায় নাকি এক প্রাক্তন কয়লা মাফিয়ার সাথে জোট বেঁধে এক প্রোমোটার/ ঠিকাদার, আরেক জমির দালাল শহরের ওপরতলার কিছু মানুষকে বশ করে নতুন দাদাগিরি শুরু করেছে বলে অভিযোগ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments