সংবাদদাতা, দুর্গাপুর,আসানসোল ও জামুরিয়াঃ- সালটা ছিল ১৮৫৫ সালের ৩০ শে জুন। ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীর ধনুক, বল্লব নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন সিধু আর কানু। হাজার হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা শামিল হয়েছিলেন সেই বিদ্রোহে। ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচারের বিরুদ্ধেও চলেছিল তাদের বিদ্রোহ। সেই আন্দোলনে শহীদ হয়েছিল সিধু-কানু সহ শতশত আদিবাসী সন্তান। তবুও ইংরেজদের উৎখাত না করা পর্যন্ত থামেনি তাদের বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহের আরেক নাম ‘হুল’। স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হওয়া ১৮৫৫ সালের ৩০ শে জুন তারপর থেকে প্রতিবছর পালিত হয় ‘হুল দিবস’ হিসাবে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপশি কাঁকসার কুলডিহা এলাকাতেও জুমিত গাঁওতার উদ্যোগে পালিত হচ্ছে সিধু, কানুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে হুল দিবস। সকাল থেকে আদিবাসী নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তারপরেই ফুটবল প্রতিযোগিতায় মেয়েদের চারটি দল এবং ছেলেদের আটটি দল অংশ নেয়। উপস্থিত ছিলেন কাঁকসা ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ প্রবোধ মুখার্জি সহ জুমিত গাঁওতার সদস্যরা। জুমিত গাঁওতার বুধন হেমব্রম বলেন, “প্রতিবছরই আমরা হুল দিবস পালন করে থাকি। প্রতিবছরের মত এ বছরও ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি। এলাকার বহু মানুষের উপস্থিতিও রয়েছে।” পঞ্চায়েত সমিতির পুত্র কর্মাধ্যক্ষ প্রবোধ মুখার্জি বলেন,”পানাগড়ে সরকারি উদ্যোগে পালিত হচ্ছে হুল দিবস। পাশাপাশি আমরা কুলডিহা এলাকাতেও হুল দিবস পালন করে থাকি। নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। আদিবাসীদের চরম উৎসাহ থাকে।”
অন্যদিকে ইন্ডিয়া পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড বা আইপিসিএল ‘হুল দিবস’ উপলক্ষে রবিবার সংস্থার সিএসআর বা কর্পোরেট সোশাল রেসপনসেবলিটির উদ্যোগ ” স্বাস্থ্য সমৃদ্ধি ” র প্রকল্পে সমাজের বঞ্চিত সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য একটি বিনামূল্যে চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিলো ।
জামুরিয়ায় আয়োজিত হওয়া এই শিবিরে ৫ শতাধিক রোগী তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। নামী প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালের ডাক্তারদের নেতৃত্বে একটি কল্যাণ সংস্থা ” হিন্দোল ” র সহযোগিতায় শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এই শিবিরে বিনামূল্যে কাউন্সেলিং বা পরামর্শ দেওয়া , ওষুধ, ইসিজি স্ক্রিনিং, রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ এবং হাড়ের খনিজ ঘাটতি পরীক্ষা করা হয়। এদিনের শিবিরে উপস্থিত চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন অর্থোপেডিক প্লাস্টিক সার্জন ডাঃ প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্য, ডাঃ মনীন্দ্র নাথ রায়, অর্থো এবং ক্রীড়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ কবিতা মুখোপাধ্যায় , কার্ডিওলজি ডাঃ অমর রায়, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিধান রায়, জেনারেল মেডিসিন ডাঃ সৌমেন দে, চাইল্ড কেয়ার স্পেশালিস্ট ডাঃ চিত্রা পাল ও গাইনোকোলজিস্ট চিকিৎসক ছিলেন ।
এই প্রসঙ্গে, আইপিসিএলের হোল টাইম ডিরেক্টর সোমেশ দাশগুপ্ত বলেন, আমরা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে ফিরিয়ে দেওয়ার আমাদের প্রচেষ্টার জন্য খুব গর্বিত। ইন্ডিয়া পাওয়ারে আমরা ক্রমাগতভাবে অভাবীদের সেবা করার উপায় খুঁজছি।চিকিৎসা চাহিদার সুষম বন্টন একটি গুরুতর সমস্যা। মানসম্পন্ন কাউন্সেলিং ও ওষুধের অ্যাক্সেস একটি চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। আমরা এই ব্যবধান বন্ধ করার একটি ছোট চেষ্টা করেছি মাত্র। এদিনের এই অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়ান পাওয়ারের আধিকারিক হিসেবে ছিলেন অয়ন নাগ, রামপ্রসাদ তিওয়ারি, মৃণাল মুখোপাধ্যায় , অরিন্দম কুন্ডু, অপরূপ চট্টোপাধ্যায়, মোহনা সেনগুপ্ত এবং সঞ্জয় সিং।