সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– গত ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়ায় দুদিনের ভারী বর্ষণে ও ডিভিসর ছাড়া জলের তোড়ে উত্তাল দামোদরে ভেসে গেছে সেতু। দীর্ঘ ঘুরপথের সময় ও ভোগান্তি এড়াতে চলেছে দামোদরের উপরে রেললাইন দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার।
প্রসঙ্গত টানা বর্ষার বৃষ্টি ও তার সঙ্গে মাইথন জলাধার থেকে ডিভিসি জল ছাড়ায় ভেসেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের বার্ণপুরে নেহেরু ( ল্যামিয়ার) পার্ক সংলগ্ন দামোদরে থাকা অস্থায়ী বাঁশের সেতু। যার জেরে দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মুখে পড়েছেন পুরুলিয়া ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সহ বার্ণপুরের কয়েক হাজার মানুষ। শুধু দামোদর লাগোয়া এই দুই জেলার মানুষেরা শুধু নন,আশপাশের জেলা এমনকি কলকাতা ও হাওড়া থেকে আগত লোকজনও কম সময়ে পুরুলিয়া যাওয়ার জন্য দামোদরের এই অস্থায়ী সেতু ব্যবহার করে থাকেন।
এমন অনেকেই রয়েছেন যারা এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন দামোদর নদী পারাপার করতেন, যেমন দিনমজুর, শ্রমিক, সবজি সহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে রুটি রোজগার করা মানুষজন। এখন এইসব মানুষদেরকে ঘুরপথে ডিসেরগড় দিয়ে ৪২ কিলোমিটার ও রানিগঞ্জ দিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। যা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। এতোটা ঘুরপথ একদিকে সময়সাপেক্ষ ও অন্যদিকে ব্যয়বহুলও। এভাবে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হলে ছোট ব্যবসায়ীদের জিনিসের দামও বেড়ে যাচ্ছে। আবার যারা কারখানায় কাজ করে তাদের অনেক ভোরে বেরোতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে দামোদরের উপরে রেললাইন দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করছেন অনেকেই। নদীতে নৌকা চললেও তা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চলে। তাই গত তিনদিন ধরে রেলে লাইন দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে দেখা যাচেছে বার্ণপুরে দামোদর নদীতে।
উল্লেখ্য নদীর উপর এই অস্থায়ী সেতু বর্ষাকালে অনেক সময়ই ভেঙে যায়। কিন্তু আবার সেই অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয় চারমাস পরে। তাই প্রশ্ন উঠেছে তবে কি ততদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হবে সাধারণ মানুষকে? এই প্রেক্ষিতে নদীর দুই দুই পারের বাসিন্দাদের দাবি শীঘ্র নদীর উপর একটা স্থায়ী সেতু তৈরি করা হোক। এতে দুই পারের ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবিদের থেকে সাধারণ মানুষের কিছুটা সুরাহা হবে। তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপার করতে হবে না।
প্রসঙ্গতঃ, ইউপিএ সরকারের আমলে ডঃ মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাশ পাসোয়ায় এই বার্ণপুরে এসে দামোদর নদীতে একটি ব্রিজ তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ঠিক করা হয়েছিলো রেল ও সেইল যৌথ ভাবে ব্রিজ করবে। কিন্তু তারপর এক দশকের বেশি সময় পার হয়েছে। দামোদর দিয়ে অনেক জল বয়েছে, কিন্তু ব্রিজ আজও হয়নি।
অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল জানিয়েছেন, কলকাতায় বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে গোটা বিষয়টি তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে জানিয়েছেন। তিনি দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বেনন্দ সোনেয়ালের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। বিধায়িকা চেষ্টা করছেন এই সপ্তাহেই দিল্লি গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার।