সন্তোষ মণ্ডল,আসানসোলঃ– কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও গণ্ডগোল। প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অনুষ্ঠানে বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ। উপাচার্য সহ অন্য অধ্যাপক, অধ্যাপিকা ও শিক্ষা কর্মীদের হেনস্থা ও ধাক্কাধাক্কির অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্ণা বিক্ষোভ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের। যদিও গন্ডগোলের কথা অস্বীকার করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, শুক্রবার আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস ছিলো। সেই উপলক্ষ্যে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ডাঃ দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মূর্তিতে মাল্যদান করেন। তারপর তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলে কাজী নজরুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত নানা আলোচনা করছিলেন। অভিযোগ, সেই সময় অতর্কিতে বেশ কিছু বহিরাগত যুবক পড়ুয়া বলে পরিচয় দিয়ে জোর করে কনফারেন্স হলের দরজা ধাক্কা মেরে ভেতরে ঢুকে পড়ে। আরো অভিযোগ, তারা হলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনিস ভাঙচুর করে ও উপাচার্যকে শাসাতে থাকে। তারা জানতে চায়, দরজা বন্ধ করে হলের ভেতরে কি করা হচ্ছে? তখন সেখানে থাকা অন্য অধ্যাপক ও শিক্ষা কর্মীরা বলেন, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তখন ওই যুবকেরা জানতে চায়, কেন করা হচ্ছে? উপাচার্য কি মিটিং করছেন? এইসব করা চলবে না। এরপর ওই যুবকের এগিয়ে যেতে গেলে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা বাধা দেন। তখন তাদের উপরে হামলা চালানো হয় বলে দাবি। এর ফলে এক প্রতিবন্ধী মহিলা কর্মী পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। এই ঘটনায় পরে বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এই ঘটনার পরই কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা তাদের নিরাপত্তা ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা বলেন, এই হামলা মনে নেওয়া যায়না। প্রতিবন্ধী মহিলা কর্মীকে মারা হয়েছে। উপাচার্যকে হেনস্তা করা হয়েছে।
অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলা টিএমসিপির সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায় বলেন, ওই যুবকেরা কেউ বহিরাগত নয়, সবাই পড়ুয়া। হল বন্ধ করে কি হচ্ছিলো, তা জানতে তারা ওখানে যায়। আমরা দাবি করে আসছি, কলেজ ফান্ডের হিসাব দিতে হবে বলে। তারজন্য আন্দোলন করছি। তা না করে উপাচার্য অনুষ্ঠান করছেন।
প্রসঙ্গতঃ বেশ কিছু দিন ধরেই অশান্তির বাতাবরণ চলছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। টিএমসিপি-র অভিযোগ, ছাত্র ভর্তির টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ের খাতে খরচ করা হয়েছে। ব্যয় হওয়া প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে ফেরত দেওয়ার দাবি নিয়ে চলে আন্দোলন। টিএমসিপি নেতৃত্বের দাবি, কখন, কোথায়, কী কারণে এই টাকা খরচ করা হয়েছে— তা শ্বেতপত্র প্রকাশ করে উপাচার্যকে জানাতে হবে। পরিস্থতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, কয়েক দিন আগে নিজের বাড়িতে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করতে হয়েছে উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি এ নিয়ে তিনি চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে। তার মধ্যেই শুক্রবারের এই ঘটনা।