eaibanglai
Homeএই বাংলায়এটিএম নয়, দুর্গাপুরের ব্যাংকের চেকেই লাখ লাখ লুঠ জামতাড়া গ্যাংয়ের

এটিএম নয়, দুর্গাপুরের ব্যাংকের চেকেই লাখ লাখ লুঠ জামতাড়া গ্যাংয়ের

নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: আর এটিএম কার্ডের ভরসায় নয়, এবার ব্যাংকের হেফাজতে থাকা চেকবই ব্যবহার করেই দুর্গাপুর থেকে লাখ লাখ টাকা গায়েব করে দিচ্ছে কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাং। চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনায় তদন্ত শুরু করে পুলিশের দাবি, শহরের সিটিসেন্টারের ঐ ব্রাঞ্চের ভেতরেই নির্ঘাত রয়েছে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাংয়ের এজেন্ট।

এমন চমকে যাওয়ার মতো ঘটনাটির শিকার স্বাগতা তিওয়ারি মুখার্জী নামের শহরের ইস্পাতনগরীর সি – জোনের এক গৃহবধূ। তিনি বলেন,”আমার কোনো এটিএম কার্ড নেই। আমার নতুন চেকবইও ব্যাংকের হেফাজতে। তাহলে কি করে আমার একাউন্ট থেকে দেড় লাখ টাকা উঠে গেলো?” তার অভিযোগ, ” আমি অভিযোগ জানাতে গেলে প্রথমেই ওরা আমাকেই চোর, জালিয়াত বলে তাড়িয়ে দিচ্ছিল। একজন হিন্দিভাষী মহিলা আর পলাশ নামের এক স্টাফ সকলের সামনেই চিৎকার করে আমাকেই জালিয়াত বলে তাড়া করে ভাগিয়ে দিচ্ছিল। আজকে ব্রাঞ্চে গিয়ে দেখলাম ওই মেয়েটি ডিউটিতেই আসেনি। এটা বড়সড় ষড়যন্ত্র।”

ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে বুধবারই সিটিসেন্টারের ইউনাইটেড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগী এক গৃহবধুর লুঠ হওয়া টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিলে ব্রাঞ্চের অভ্যন্তরীণ যোগসাজশের সন্দেহ আরো তীব্র হয়। ব্রাঞ্চটির মুখ্য ম্যানেজার সুনীল সাহু বলেন, “বোঝাই যাচ্ছে যে একটা অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। আমরা আমাদের সাসপেন্স একাউন্ট থেকে ঐ মহিলার একাউন্টে লুঠ হওয়া দেড় লক্ষ টাকা এক সপ্তাহের মধ্যেই ফেরত দিয়ে দেবো।” তিনি আরো জানান, “উনি পুলিশে একটি অভিযোগে করেছেন। আমরাও ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঘটনার একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করছি শীঘ্রই।”

আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের তরফে এদিনই শুরু হয়েছে একটি জোরদার তদন্ত। এদিনই পুলিশ ওই ব্রাঞ্চে এসে লুণ্ঠিত একাউন্টের সাথে জড়িত নথিপত্র, সিসিটিভি ফুটেজ এবং যে জায়গা থেকে টাকা উঠেছে, সেই লোকেশনের বিস্তারিত লিংক নিয়ে গেছে। সাইবার ক্রাইমের এসিপি বিশ্বজিত নস্কর এদিন বলেন, “এতদিন এটিএম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টাকা লুঠ হতো। এতো দেখা যাচ্ছে ব্যাংকের হেফাজতে থাকা চেকবই ব্যবহার করেই একাউন্ট থেকে টাকা গায়েব করে দিলো দুষ্কৃতীরা।” পুলিশের অনুমান দুর্গাপুরের বহু ব্যাংকের ব্রাঞ্চে জামতাড়া গ্যাংয়ের এজেন্ট ছদ্মবেশে থেকে সাধারণ গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা লুঠ করে চলেছে। তবে, চেকবই ব্যবহার করে টাকা লুঠের নজিরবিহীন ঘটনায় হতবাক পুলিশও।

কিন্ত,কি ভাবে সম্ভব হলো এই লুঠ?

স্বাগতার চেকবইএর পাতা শেষ হলে, তিনি গতসপ্তাহে নতুন চেকবই এর আবেদন করেন। ব্রাঞ্চ তার ঠিকানায় গত শনিবার নতুন চেকবই পোস্ট অফিস মারফৎ পাঠিয়েওছিল। কিন্তু, স্বাগতা বাড়িতে না থাকায় তা ফেরৎ আসে ব্রাঞ্চে। সেকথা ফোন করে স্বাগতাকে জানানোও হয়। স্বাগতার কথায়, “আমি ওনাদের বলি আমি নিজে ব্রাঞ্চে গিয়ে সোমবার চেকবই নিয়ে নেবো। কিন্তু বৃষ্টির জন্য সোমবারও যেতে পারিনি। মঙ্গলবার ব্রাঞ্চে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় আমার মোবাইলে হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে একটা দেড় লাখ টাকা তোলার এসএমএস ঢুকলো। আমি অবাক – এটা কি করে সম্ভব?” তিনি দ্রুত সিটিসেন্টারের ঐ ব্রাঞ্চে গেলে, তাকে দেখানো হয় স্বাগতা নাকি কমলেশ মারান্ডি নামের একজনকে চিঠি দিয়ে তার চেকবইটি ব্রাঞ্চ থেকে উঠিয়ে নিতে অথরাইজ করেছেন। হতবাক স্বাগতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি কাউকেই অথরাইজ যেমন করেননি, তেমনি, তিনি এই কমলেশকে আদৌ চেনেন lই না, তাই উটকো ওই লোককে দিয়ে চেকবই সংগ্রহের এরকম কোনো সম্ভাবনাই নেই। স্বাগতার দাবি, “এ কথা জোর দিয়ে বলতেই ওরা দারুন রেগে গেলেন। আমাকে ওতো লোকের সামনে যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করতে শুরু করলেন।” এসময়ই ম্যানেজারের নির্দেশে স্বগতাকে সেই অথরিজেশন চিঠি দেখানো হলে ঐ গৃহবধূর চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। তিনি বলেন, “ঐ চিঠির সই টা অনেকটাই আমার মতো করে করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু, ওটা আমার সই নয়।” তিনি একথা ম্যানেজারকে বললে, ম্যানেজার নাকি বলেন, রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ৮০ শতাংশ সই মিললেই টাকা দিয়ে দিতে হবে, তাই ঐ চিঠির ভরসায় চেকবই অন্যজনকে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনার জল অনেকদূর গড়াবে বলে স্বাগতার বাবা রবীন্দ্রনাথ তিওয়ারি জানান। এদিন অভিযোগ দায়ের করতে স্বাগতার সাথে দুর্গাপুরের সাইবার থানায় গেছিলেন পুলিসের টেলিকম বিভাগে কর্মরত তার মামা স্বরূপ পান্ডে নিজেও। তিনি বলেন, “যাচ্ছেতাই লুঠ। এর সুরাহা নাহলে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments