সঙ্গীতা চ্যাটার্জীঃ- একবার একজন ভক্ত প্রশ্ন করেছিলেন, কেন সংসারে অনাচার এত বেশি দেখা যায়? কেন সত্যকে জয়ী দেখতে পাই না? এর উত্তরে স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলেন, ভালো মানুষ আছেন, কিন্তু খারাপ মানুষের মতো তাদের কার্যকলাপ ততো সক্রিয় নয় তাই তাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু তারা আছেন। ওই ভক্তকে উত্তর দিতে গিয়ে মহারাজ বলেছিলেন,“একবার ভাবুন তো নিজের আত্মীয়, বন্ধু, পরিচিতদের সম্বন্ধে। এদের মধ্যে ক’জন শয়তান? সমাজে ভাল মানুষের সংখ্যাই বেশি। খারাপ লোকেরা কম হলেও তারা সক্রিয় কিন্তু সৎ লোকেরা তা নয়। ফলে বদমাশদের কাজই চোখে পড়ে বেশি।”
এরপর ভালো খারাপের ভেদাভেদ কীভাবে করা যাবে সেই প্রসঙ্গে মহারাজ বলেন,“আপনার নিজের কথাই ভাবুন। মূলত সৎ মানুষ আপনি। দীক্ষা নিয়ে আধ্যাত্মিক উন্নতির চেষ্টাও করছেন। সমাজের দুরবস্থা দেখে দুঃখ পান। এবং কিছু লোকের ভাল করে চলেছেন। কিন্তু সমাজে বিশেষ সক্রিয় ভুমিকা না নিয়ে সীমিত ক্ষেত্রে নিজেকে রেখেছেন। কারণ আপনি স্বামীজির কথা নিয়ে বিশেষ উদ্বুদ্ধ নন। বেদান্তের যে বাণীর উপর তিনি জোর দিয়েছেন বার-বার “তোমার মধ্যে অসীম শক্তি”, ” তুমি মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত”, “সমাজে শুভ শক্তিকে বলবান করে তোলো” ইত্যাদি নিয়ে বিশেষ ভাবেন নি। “আত্মনো মোক্ষার্থং”-এর চেষ্টা করছেন কিন্তু “জগৎ হিতায়” নিয়ে অতটা নয় হয়তো। সমাজে বিশেষ ক্রিয়াশীল ভূমিকা নিচ্ছেন না। রামকৃষ্ণ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনি যে আরও সক্রিয় হতে পারেন তা নিয়ে ভাবেন নি।”
একই সাথে সকাল ও সন্ধ্যে জপ করার মধ্যে যে ধর্ম সীমাবদ্ধ নেই সেটিও বলেন মহারাজ, তার কথায়, “কিছু মানুষ ধর্মকে সকাল-সন্ধ্যায় আটকে রাখেন। ধর্ম যে 24×7 কাজ, ব্যক্তি+সমাজে সক্রিয় হওয়া, এ নিয়ে সচেতন নন। গীতা ও চণ্ডীর মূল কথাটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেননি। তারা যে অসীম শক্তির অধিকারী এবং সমাজে শুভ শক্তির উদয়ে বড় ভূমিকা নিতে পারেন, এ নিয়ে বোধহয় সচেতন নন।”