মনোজ সিংহঃ- চললাম উত্তরে অমৃত কুম্ভের সন্ধানে। জীবনের অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি, খোঁজ নেবো তারও। আরো খুজবো – কেনো উত্তর পুরুষের জন্য চিঠি পাঠায়না পূর্বপুরুষ!
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ অনুসারে দেব ও দানবের (অসুর) যৌথ উদ্যোগে সমুদ্র মন্থন থেকে উঠে এসেছিল অমৃত কুম্ভ। আর সেই অমৃত কুম্ভের ভাগ পেতেই আসলে নাকি দেব দানবের যুদ্ধ বেঁধে যায়। অবশেষে, দেবলোকের বাসিন্দাদের জয় হলেও দানবদের বা অসুরদের যে পরাজয় হয়েছিল তা কিন্ত ঠিক বলা যায়না। অমৃতকুম্ভের ভাগ না পেয়ে দানবদের মধ্যে আজও রয়ে গিয়েছে অমৃত কুম্ভের ভাগের অসীম তৃষ্ণা, লোভ, কিন্ত নেই তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় তিতিক্ষা, ত্যাগ।
মানুষ আজও অমৃতকুম্ভের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছে দিক থেকে দিগান্তর । সদ্য মাতৃহারা আমিও বিচলিত ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি সেই অমৃতকুম্ভের সন্ধানেই। তাই হঠাৎ করে আমার এই দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা। সঙ্গী নিলাম আমার অত্যন্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় গুরু ও ভ্রাতৃ সমূহ উমেশ, হারাধনকে। আমার ডানপাশে হারাধন ও বাঁ পাশে উমেশ। সহজেই বুঝতে পারছেন একদিকে নারায়ন অন্যদিকে দেবাদীদেব মহাদেবের মাঝখানে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে শুরু করলাম অমৃতকুম্ভর সন্ধানে পথ চলা। বাড়ি থেকে বেরোতেই স্ত্রী পুত্রের চোখ ছল ছল। অশ্রুঝরা বেবাক নয়নে বিদায় দিল তারা আমাকে। গন্তব্য দুর্গাপুর রেল স্টেশন, চেপে বসলাম তিন চাকা অটোতে। অবাক করার বিষয় রেলস্টেশন ঢোকার মুখেই বিকল হল অটো। তবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই পুনরায় যান্ত্রিক গোলযোগ ঠিক করে শুরু হল অটো চলা। দুর্গাপুর থেকে আসানসোল গামী লোকালে চেপে পৌছালাম আসানসোল রেল স্টেশন।
আসানসোল রেলস্টেশন থেকে উপাসনা এক্সপ্রেস বিকেল ৪ টায় ছাড়ার কথা থাকলেও হাওড়া স্টেশন থেকে রাত্রি সাতটা চল্লিশে ছাড়ার ফলে আসানসোলে পৌঁছানোর সময় রাত্রি এগারোটা হল। কোন আর পথ না পাওয়াই অপেক্ষায় থাকলাম উপাসনার আগমনের। আমাদের ট্রেনটি প্রায় ৯ ঘন্টা দেরিতে চলছে তাই কিছু জরুরী জিনিসপত্র কিনতে বেরিয়ে পড়লাম আসানসোল রেলস্টেশনের সংলগ্ন বাজারটির দিকে। কিছু দূর হাঁটার পরেই একটি টোটো স্ট্যান্ডের সামনে এক টোটো ভাই চালককে রাত্রিকালীন আহারে ব্যস্ত থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে বসলাম বাজারের রাস্তা, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আহার ছেড়ে আমাকে রাস্তা দেখিয়ে দিতে তৎপর হয়ে উঠল সেই টোটো চালক। উঠে বসলাম টোটো তে চললাম ঝিংড়ি মহল্লার বাজারের দিকে। পথে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলাম টোটো চালকের নাম সে জানালো তার নাম শক্তি শর্মা। হে পরম পিতা এ কি তোমার লীলা! স্বয়ং মাতৃরূপী শক্তিকেই আমার মনের শক্তির রক্ষায় পাঠিয়ে দিলে! রাস্তায় এক জায়গায় ভুট্টা ভাজা দেখে মন ভুট্টা খেতে ব্যাকুল হল। রাস্তার পাশেই এক মহিলা ভুট্টা বিক্রি করছিলেন। কথা প্রসঙ্গে ওই ভুট্টা বিক্রেতা মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম তার নাম, তিনি জানালেন তিনি পার্বতী মিশ্র। আবার অবাক হলাম স্বয়ং আমার মা পার্বতী অন্নপূর্ণা রূপে আমার ক্ষুধা নিবারণে তৎপর হয়েছে! দুটি ভুট্টা আমার নিজের জন্য ও একটি টোটো চালককে তার জন্য নিতে বলায় তার চোখে মুখে এক অনন্য কৃতজ্ঞতা বোধ লক্ষ্য করলাম। বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে চললাম রেলস্টেশনের ভেতরে প্লাটফর্ম নাম্বার ৪ দিকে। রাত ১১ টা নাগাদ এসে পৌছালো আমাদের প্রত্যাশিত সেই ট্রেন উপাসনা এক্সপ্রেস। বি ওয়ান কামরায় ২৫-২৬ ও ২৮ নম্বর সিটে বসে রওনা দিলাম দেবভূমি উত্ত উত্তরাখণ্ডের দিকে অমৃত কুম্ভের সন্ধানে।
চলবে……