সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ– সাধারণ মানুষ মারণ রোগ ক্যান্সারের নামে ভয়ে কাঁপে। কিন্তু ক্যান্সার মানেই যে মৃত্যু নয় প্রমাণ করেছেন বাঁকুড়া গোয়েঙ্কা বিদ্যায়তনের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক আলোক মণ্ডল। প্রায় এক দশক ধরে এই মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি। আত্মবিশ্বাস আর প্রিয় জনের আশ্বাস এই দুইকে হাতিয়ার করেই এই ভীষণ লড়াইয়ে সফল হয়েছেন, দাবি আলোকবাবুর।
আজ থেকে প্রায় আড়াই দশক আগে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছিল আলোকবাবুর। ডান চোখে হঠাৎ ব্যথা শুরু হওয়ায় চিকিৎসা করাতে চেন্নাই পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানেই ক্যান্সার ধরা পড়ে। শুরু হয় চিকিৎসা, হয় অস্ত্রোপচারও। কিন্তু ডান চোখের ক্যান্সার পৌঁছে যায় বাম চোখে। এরপর তা আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে পড়ে শরীরের নানা অঙ্গে। দীর্ঘ সময় হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করিয়ে এক প্রকার সর্বশান্ত হন। খরচ হয়ে যায় প্রায় ২১ লক্ষ টাকা। বাধ্য হয়েই শরীরে টিউমার নিয়েই ফিরে আসেন বাঁকুড়া। কলকাতায় চিকিৎসা করানো ব্য়ার্থ চেষ্টার পর হতাশ হয়ে পাড়ি দেন মুম্বাই। সেখানে প্রায় ছটা কেমোথেরাপি, ১১৪ টা রেডিয়েশন এবং প্রায় ৮-৯ বছরের শারীরিক এবং মানসিক লড়াইয়ের পর অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। ফিরে পান স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ। এই দীর্ঘ ও কঠিন যুদ্ধে প্রতিমুহুর্তে শারীরির, মানসিক ও আর্থিকভাবে স্বামীর পাশে থেকে তাকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা হীরামনি মণ্ডল। তাঁকে ছাড়া এই যুদ্ধ জয় সম্ভব ছিল না বলে জানিয়েছেন আলোকবাবু।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে বাঁকুড়া লাইফ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতামূলক এক সংগঠন তৈরি করেন আলোক মণ্ডল। এর পাশাপাশি চলতে থাকে সাহিত্যচর্চা। বরাবরই কবিতা ভালোবাসেন আলোক বাবু। বাংলা সাহিত্যের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। আলোকবাবু জানান চেন্নাইয়ে চিকিৎসারত থাকার সময় প্রায় ২৪ ঘণ্টাই শুয়ে থাকতে হত হতো তাঁকে। সেই সময় সারা দিন কবিতা লিখতেন। পরে তাঁর মোট ১৬ টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা কবিতার সংখ্যা হাজারেরো বেশী।
ক্যান্সারকে জয় করে, সাহিত্যচর্চা করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রাক্তন এই শিক্ষক। পত্রিকার সম্পাদনা, মানুষকে ক্যান্সার সম্বন্ধে সচেতন করা এবং কবিতার খাতায় নিজেকে নিমজ্জিত রেখে এক গঠনমূলক জীবন যাপন করে চলেছেন আলোকবাবু। তাঁর এই জীবন ক্যান্সর রোগী তো বটেই সাধারণ মানুষকেও জীবন যুদ্ধে লড়াই করে জিতে ফেরার প্রেরণা যোগাচ্ছে।