eaibanglai
Homeএই বাংলায়ডাকাতদের ৫৮ লাখ অগ্রীম বুকিং চাওলার ছেলে বউয়ের, দুর্গাপুরের ডাকাতিতে কিন্তু লুঠ...

ডাকাতদের ৫৮ লাখ অগ্রীম বুকিং চাওলার ছেলে বউয়ের, দুর্গাপুরের ডাকাতিতে কিন্তু লুঠ হলো ব্যাগ ভর্তি নুন

নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে কি একেই বলে? জেলবন্দী দুর্গাপুরের দুই পুলিসের দশা দেখে এমন মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ ৫ সেপ্টেম্বরের যে কোটি টাকা লুঠের দায়ে তারা এখন ১০ দিনের জেল হেফাজতে, ওই হাইওয়ে ডাকাতিতে আসলে নাকি কোটি টাকা নয়, লুঠেরা গ্যাং লুঠ করেছিল এক ব্যাগ ঠাসা তাজা নুন। তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকেরা এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই পেয়েছেন ধৃত গ্যাং মেম্বারদের কাছ থেকে, বলে শিল্পাঞ্চলের বরিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিকেরা জানিয়েছেন।

আরো মজার কথা হলো, লুণ্ঠিত ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকেরা ওই ডাকাতির আগেই খোদ ডাকাতদেরই ব্যাংক একাউন্টে কয়েকদফায় ৫০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছেন সুদুর দিল্লি, মুম্বাই থেকে, গত ২২ আগস্ট থেকে খোদ ডাকাতির দিন ৫ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত। অর্থাৎ, জাতীয় সড়কে যা লুঠ সে তো হবেই, ওই ডাকাতিটি ঠিকঠাক করানোর জন্য খোদ সেই ব্যবসায়ীর পরিবার থেকেই অগ্রীম বুকিং ৫০ লাখ টাকার? এ কেমন ডাকাতি – যা কিনা প্রাচীন বাঙলার রঘু ডাকাতের রোমহর্ষক কাহিনীকেও হার মানায়?

“বাপের জন্মেও এমনটা শুনিনি। এতদিন পুলিশের চাকরি করছি, কখনও এমনটা দেখিওনি,” দাবি দুর্গাপুর থানার এক প্রবীণ পুলিশ অফিসারের। তাহলে, ঘোর কলিতে এমনটা যে হতেই পারে, তার টাটকা নজির মিলল শহর দুর্গাপুরের বুকেই!

নাটকীয় হাইওয়ে ডাকাতির তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে যেসব চমকপ্রদ তথ্য দিনদিন উঠে আসছে,তাতে খোদ আধিকারিকদেরই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। এনিয়ে দুর্গাপুরের আধিকারিকেরা যে তদন্ত দল গঠন করেছেন, তাতে এ পর্যন্ত দুর্গাপুর থানার সহকারী সাব ইন্সপেক্টর অসীম চক্রবর্তী, সিআইডিতে ডেপুটেশনে থাকা এক কনস্টেবল চন্দন চৌধুরী ছাড়াও ২৪: ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার হয়েছিলেন মেদিনীপুরের ৮ নং সশস্ত্র ব্যাটালিয়নের বরখাস্ত হওয়া পুলিশকর্মী মৃত্যুঞ্জয় সরকার সহ দুর্গাপুরের তিন অপরাধী যুবক। পরে, তাদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে এই ডাকাতির গুরুত্বপূর্ণ তিন চরিত্রের ব্যাপারে। তারা – আসানসোলের রুপনারায়নপুরের অবৈধ রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী পৃথ্বীরাজ জৈসোয়াল, তার সাগরেদ অজয় দাস এবং পূর্ব মেদিনীপুরের চপের স্বর্গ পাঁসকুড়ার এক ঢপ মাস্টার মধুসূদন বাগ। এই বাগের জালিয়াতির ঢের নজির রয়েছে নাদিয়ার কল্যানিতে। সেখানকার পুরসভায় ট্রেড লাইসেন্স জালিয়াতির অভিযোগে আগে একবার পুলিশ বাগে পায় এই ঢপ মাস্টার বাগকে। সেখানেই তার চারটি দোকানও ছিল।

গত ৫ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড় এলাকায় জাতীয় সড়কের ডাকাতিতে দিল্লির ব্যাবসায়ী মুকেশ চাওলার যে ১.০১ কোটি টাকা লুঠ হয়েছিল বলে অভিযোগ, তার সিংহভাগ টাকাই নাকি মধুসূদন ডাকাতির আগেই গিলে বসে ছিল। কারণ, চাওলার পুত্র পঙ্কজ আর স্ত্রী রেখা ২২ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের মুম্বাই, দিল্লির ব্যাংক একাউন্ট থেকে নেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই মধুসূদনের কল্যানীর এক ঘনিষ্ঠ মুদিখানার একাউন্টে চার দফায় মোট ৫৮ লক্ষ টাকা অগ্রীম শুভেচ্ছা স্বরুপ পাঠিয়ে দিয়েছিল। কেনো? দুর্গাপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গুপ্তা জানান, “ধৃতদের কাছে রোজ নতুন নতুন তথ্য মিলছে। তদন্ত এখন প্রায় শেষের দিকেই এগিয়ে চলেছে। আরো দুই দাগী অভিযুক্তকে ধরতে পারলেই সমাধান আসবে হাতের মুঠোয়।” তিনিই জানান, “ওরা পুলিশের কাছে ফোন করে ডাকাতির খবর দেয়। কিন্তু, চাওলার লুঠ হওয়া ব্যাগে টাকাই ছিলনা। ছিল নুনের ব্যাগ, বলে ধৃতরাই কবুল করেছে।” তাহলে, টাকাটা? মধুসূদনের ১৪ টি ব্যাংক একাউন্টের দুটি ফ্রিজ করেছে পুলিশ। তবে, এখনো পুরো টাকা উদ্ধার হয়নি। যেমন রহস্যের জট খোলেনি – ডাকাতদের একাউন্টে চাওলার ছেলে,বউ কেনো ডাকাতির আগেই পাঠালো ৫৮ লাখ?

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments