সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- বহরমপুরের ঋত্বিক নাট্যগোষ্ঠীতে ২০১৬ সাল থেকে থিয়েটার করতেন অভিনেতা অরিজিৎ লাহিড়ী। সেইসময় তাদের দলের সম্পাদক মোহিত বন্ধু অধিকারী অভিনয়ের ক্ষেত্রে তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। এরপর একটার পর একটা থিয়েটারে অভিনয় করতে করতেই বড় পর্দায় পা রাখেন অভিনেতা। এখন বড়পর্দায় ফটাস ছবি থেকে শুরু করে আরও চারটি ছবির কাজ সেরে ফেলেছেন তিনি। এমনকি এই ২০২৪ এর মহালয়ার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেও অভিনয় করে ফেলেছেন-এই সব নিয়েই ‘এই বাংলায়’এর সাংবাদিক সঙ্গীতা চৌধুরীকে সাক্ষাৎকার দিলেন অভিনেতা অরিজিৎ লাহিড়ী। মহালয়ার চরিত্র থেকে ফটাস চরিত্র প্রসঙ্গে করলেন খোলাখুলি আলোচনা।
১। সঙ্গীতা চৌধুরী: আপনি মহালয়াতে নতুন কী কাজ করছেন?
অরিজিৎ লাহিড়ী: এইবছর মহালয়ায় হইচইতে একটা ওয়েব সিরিজ হচ্ছে। সায়ন্তন মুখার্জী পরিচালনা করছেন আর মহাবহু মশান পিকচার ও হইচইয়ের যৌথ প্রযোজনায় আসছে। ওখানেই একটা চরিত্র করছি।
২। সঙ্গীতা চৌধুরী: কী চরিত্র বলা যাবে?
অরিজিৎ লাহিড়ী: হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আমি চন্ডাসুরে চরিত্রে অভিনয় করেছি। চন্ড ও মুন্ড নামে যে দুজন অসুর ছিল, তার মধ্যেই একটি, সবাই জানেন গল্পটা, তাই আর রিপিট করছি না।
৩। সঙ্গীতা চৌধুরী: আচ্ছা, তো মহালয়াতে এরকম একটা চরিত্র করতে পেরে কী রকম অভিজ্ঞতা হল?
অরিজিৎ লাহিড়ী: আমার বেশ ভালো লেগেছে এরকম একটা এক্সপেরিমেন্টাল চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে, পরিচালক সায়ন্তন দা প্রথম দিনই বলেছিলেন যে অভিনয়টা একটু লার্জার দ্যান লাইফ হবে কিন্তু থিয়েটারের মত হবে না, তো সেই ভাবেই পারফরমেন্সটা করার চেষ্টা করেছি। আশা করেছি, দর্শক কাজটিকে পছন্দ করবেন।
৩। সঙ্গীতা চৌধুরী: আপনার প্রথম কাজ কী?
অরিজিৎ লাহিড়ী: আমার চলচ্চিত্রে প্রথম আবির্ভাব হয়েছে রঞ্জন ঘোষ পরিচালিত মহিষাসুরমর্দিনী ছবিতে। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল একই ছবিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক করের সাথে অভিনয় করার। সেখানে আমি একজন মৃৎশিল্পীর চরিত্র করি, চরিত্রটির নাম ছিল জগা।
৪। সঙ্গীতা চৌধুরী: মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে এরকম একটা অনিশ্চিত পেশায় কেন এলেন?
অরিজিৎ লাহিড়ী: অনিশ্চিত পেশা তো বটেই। কিন্তু আমি জানি না আমার এটাই সবথেকে করতে ভালো লাগতো বা ভালো লাগে আর আমার মনে থ্রি ইডিয়ট ছবিটা খুব ভালো একটা প্রভাব ফেলেছিল যে নিজের প্যাশনকে কাজ বানাও তাহলে কাজকে আর কাজ না খেলা মনে হবে। তো আমার মনে হয় যে অভিনয়টা আমি অল্প বিস্তার হলেও পারি তাই তো অভিনয়টা করে আমি যে জব সেটিসফেকশনটা পাচ্ছি বা আমার মানসিক শান্তি টা পাচ্ছি সেটা আমি অন্য কোনও পেশায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি অথচ ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতি কোন ইন্টারেস্ট ছিল না আমার।
৫। সঙ্গীতা চৌধুরী: পরিবারের কেউ সিনেমা বা থিয়েটারে ছিলেন?
অরিজিৎ লাহিড়ী: না, আমার পরিবারের কেউই সিনেমা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত নন। আমার বাবা দীর্ঘদিনের নাট্য দর্শক, দীর্ঘদিন ধরে নাটক দেখছেন এবং বাবা সাহিত্য নিয়ে খুব চর্চা করেন কিন্তু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বা থিয়েটার ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে নয়। আমার ঠাকুমার এক ভাই থিয়েটারে অভিনয় করতেন এটা আমি শুনেছি কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু পরিবারে নেই, আমি মূলত এই পেশায় প্রথম।
৬। সঙ্গীতা চৌধুরী: মধ্যবিত্ত পরিবারের থেকে এরকম রূপোলি পর্দায় এসেছেন,পরিবারের সমর্থন ছিল?
অরিজিৎ লাহিড়ী: মধ্যবিত্ত বাড়িতে যা হয় একটা তো বাবা-মায়ের চিন্তা ছিলই, অনিশ্চিত পেশা তাই। কিন্তু আমি আমার বাবা-মাকে আমার নাটক দেখায় বহরমপুরে এবং আনন্দবাজারে আমার একটা নাটকের রিভিউ এসছিল যেখানে আমার নাম ছিল। দর্শকরাও বলেছিলেন যে, আমি খুব ভালো অভিনয় করেছি তো এগুলো দেখেই আমার বাবা একটু বুঝতে পারছিলেন যে আমি অভিনয়টাই করতে চাই, তারপর থেকে এখনও অবধি আমার বাবা, মা আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করেছেন, যে কারণে আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মনে করি।
৭। সঙ্গীতা চৌধুরী: ফটাসে একজন অপরাধ জগতের মানুষের চরিত্র করেছেন! এই চরিত্রটি কী সমাজকে কোনও পজিটিভ বার্তা দেবে?
অরিজিৎ লাহিড়ী: অবশ্যই, সমাজকে বার্তা দিচ্ছে বলেই তো ফটাস দেখে নিজেদের ভালোলাগার কথা জানাচ্ছেন দর্শক,সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। এই ছবির প্রত্যেকটা চরিত্রই একটা গল্প বলে। এবার যদি আমার চরিত্রের কথা বলি, আমার চরিত্রের নাম হচ্ছে চ্যালা। একজন ছেলে, যে পড়াশোনায় ভালো কিন্তু গরীব, বস্তিতে থাকে কিন্তু সে ইংরেজি বলতে পারে। সে সাইন্সের ছেলে অথচ ছোট থেকেই সে ক্রাইমের আশেপাশেই বড় হয়েছে। তাই ক্রাইমের প্রতি একটু আকৃষ্ট, সেও ক্রাইম ওয়ার্ল্ডের মধ্যেই আছে- তো এইরকম চরিত্রগুলো তো সমাজ থেকেই উঠে এসেছে। কিন্তু সেখান থেকে সে কী করে ভালোর পথে আসে এবং নাটকের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং কী করে সে ক্রাইম থেকে সরে সাংস্কৃতিক জগতে চলে আসে হঠাৎ করে এবং তার সঙ্গে কী কী হয়? আমার চরিত্র ছাড়াও আরও আটটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আছে তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব গল্প আছে। সেইসবটা জানতে গেলে ফটাস দেখতে হবে আর আমার চরিত্র নিয়ে যদি বলেন তাহলে বলব, চরিত্রটা করতে গিয়ে আমার একটা অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি হয়েছে আর ফটাসের ট্যাগ লাইন হল পাপীকে নয়, পাপকে হত্যা কর!- যেটা সমাজকে ভীষণ ভাবে পজিটিভ ভাইবস দেয়।