সংবাদদাতা,বাঁকুড়া,আসানসোলঃ- পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাঙালি জাতি তাঁকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মনে রাখবে ‘বিদ্যাসাগর’ বলে। তিনি শুধুমাত্র পণ্ডিতই ছিলেন না। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের জাল ছিঁড়ে প্রবর্তন করে গেছেন বিধবা বিবাহের। মহিলাদের অশিক্ষার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখিয়ে গেছেন। লিখলেন বর্ণপরিচয়। কত অন্যায়, কত অশিক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি একা। দুর্জয় সাহস, অদম্য পরিশ্রম আর সুতীক্ষ্ণ মেধাকে সম্বল করে যে মানুষটা বাংলার সমাজকে একাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন অনেকটা। যতবার অন্ধকার সময় এসে ঘিরে ধরে আমাদের, ততোবার আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন বিদ্যাসাগর। দেড় শতক আগে এ দেশের এক মানুষ যেভাবে লিঙ্গ সাম্যর জন্য লড়েছেন, সেই লড়াই এখনও জারি।
বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৫ তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন হল যথাযোগ্য মর্যাদায়।
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের আয়োজনে বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে পালিত হল পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৫ তম জন্মজয়ন্তী। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনলের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। তাঁর জীবন কাহিনী, বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর অবদান তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি। জীবন কাহিনীর পাশাপাশি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি বসুমিত্রা পাণ্ডে বলেন, “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এমন একটি ব্যক্তিত্ব যিনি আমাদের জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। আমরা যে ভাষায় কথা বলি সেই বর্ণপরিচয় তিনি আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। সেই বর্ণপরিচয়ের হাত ধরে রবীন্দ্রনাথ থেকে যত লেখক,কবি, সাহিত্যিক আছেন এবং আমরা যে ভাষায় কথা বলি সবটাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দান। নারী শিক্ষা, বিশেষত বিধবা বিবাহ প্রচলন করার মধ্য দিয়ে তিনি যে সমাজ বিপ্লব কায়েম করে গেছেন সেই বিপ্লবের পথে ছেলেমেয়েদের যদি অনুপ্রাণিত করা যায় তাহলে বুঝবো আমরা কিছুটা করতে পারলাম। বাচ্চাদের জীবনে বিদ্যাসাগরের প্রভাব অপরিসীম। তাদের আরো বেশি করে প্রভাবিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
অন্যদিকে আসানসোল আদালত চত্বরে পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান আসানসোল পৌরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চ্যাটার্জী। তিনি বলেন, “পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্য আমরা বাংলা ভাষা শিখতে পেরেছি, তিনি প্রথম বিধবা বিবাহ আইন চালু করেন। নারী শিক্ষার পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে শিক্ষিত করার প্রচেষ্টা করে গেছেন তিনি। সমাজের প্রতি তাঁর অপরিসীম অবদান বাঙালি কোনোদিন ভুলবে না।” মেয়র পরিষদের সদস্য গুরুদাস চ্যাটার্জী বলেন “পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সম্বন্ধে কিছু বলার ধৃষ্টতা নেই আমার। সমাজের উন্নয়নে তাঁর অবদানের জন্য বাঙালি জাতি তাঁর উপর চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।” মাল্যদান অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর ববিতা দাস, গার্লস কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ পি কে দে সরকার সহ বিশিষ্ট অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।