জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, কলকাতা-: ‘বাবার মমতা কি বুঝতে না বুঝতেই’ পিতৃহারা ফুটফুটে সাড়ে তিন বছরের মেয়েটি বাবার কোলে চেপে ঘুরে বেড়ানোর বয়সে মায়ের হাত ধরে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জীবনসংগ্রামে নেমে পড়ে। অন্যরা যখন পুজোর সময় মণ্ডপে মণ্ডপে ঠাকুর দ্যাখার আনন্দে মত্ত পেটের দায়ে জ্যোতি তখন মঞ্চে মঞ্চে নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করতে ব্যস্ত। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে ও নানান প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও গত প্রায় ১১ বছর ধরে লড়াই করে চলেছে ‘রাজকুমারী’ জ্যোতি। সেই লড়াই অনেকটা রূপকথার গল্পের মত।
মাত্র বছর চারের বয়সে মডেলিং দিয়ে পথ চলা শুরু। পোশাকের বিজ্ঞাপনের মডেল বাচ্চা মেয়েটার জীবনের মোড় ঘুরে যায় অশোকনগরের একটি নৃত্য ও অভিনয় শিক্ষা কেন্দ্রের কর্ণধারের সৌজন্যে। তার আগে পাশে পেয়েছিল হরিদেবপুরের একটি স্টুডিওর মালিককে। বিজ্ঞাপন ও বিভিন্ন উৎসবের মঞ্চে নৃত্য প্রদর্শন মা-মেয়ের আয়ের উৎস হয়ে ওঠে।
‘গোপাল ভাঁড়’ সিরিয়ালের হাত ধরে অভিনয় জগতে জ্যোতির প্রবেশ ঘটে। একে একে ‘রানু পেল লটারী’, ‘কেশব’, ‘কৃষ্ণকলি’, ‘প্রথমা কাদম্বিনী’, বিভিন্ন জনপ্রিয় চ্যানেলে প্রদর্শিত বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সিরিয়ালে বিভিন্ন চরিত্রে তাকে অভিনয় করতে দ্যাখা যাচ্ছে। ইংরেজি ছবি ‘প্রোজেক্ট মৃত্যুঞ্জয়’-এ লিড রোলে অভিনয় করে। তার বড় পর্দার প্রথম ছবি ‘লাড্ডু’। শর্ট ফিল্ম ‘পোস্টমাস্টার’ -এ ‘রতন’ চরিত্রে তার অসাধারণ স্বাভাবিক অভিনয় চলচ্চিত্র প্রেমী দর্শকদের মুগ্ধ করে। আর এক শর্ট ফিল্ম ‘ডানা মেলার গল্প’ তে তাকে প্রধান চরিত্রের পাশাপাশি ‘পাশবিক’, ক্লাসমেট’, প্ল্যানচেট’ প্রভৃতি পুলিশ ফাইলের বিভিন্ন চরিত্রেও তাকে দ্যাখা যায়। বিভিন্ন ধারাবাহিকে স্বল্প পরিসরে তার অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা আদায় করে নেয়। খুব শীঘ্রই তিনটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে তাকে প্রধান চরিত্রে দ্যাখা যাবে। জানা যাচ্ছে পুজোর পর একজন চলচ্চিত্র পরিচালক তাকে সামনে রেখে কয়েকটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র এবং ওয়েব সিরিজ তৈরি করবেন। এইবছর কিশোরী মেয়েটিকে নিয়ে নির্মিত একটি ব্যানার কলকাতার বিভিন্ন মণ্ডপেও শোভা পাবে। এছাড়া একটি বেসরকারি চ্যানেলে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-তে ছোট দুর্গার ভূমিকায় তাকে দেখা যাবে।
জ্যোতির বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে তার মেয়ে একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী হবে। মায়ের কাছে শোনা বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে কিশোরী জ্যোতি। পাশাপাশি আছে পড়াশোনা। সে রীতিমত মেধাবী ছাত্রী।
জীবনে চলার পথে সবসময় সে পাশে পেয়েছে মা মধুমিতা দেবীকে। সহ অভিনেতা ও পরিচালকরা তাকে সন্তান স্নেহে আগলে রেখেছে। তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ দেখে পরিচালকরা উচ্ছ্বসিত। প্রত্যেকেই তার মধ্যে প্রকৃত অভিনেত্রীর সন্ধান পেয়েছেন।
সন্তানের জন্য গর্বিত মা মধুমিতা দেবী বললেন, যারা কন্যা সন্তান হলে দুঃখ করেন তাদের বলব আমার মেয়েকে দেখে হতাশা দূর করুন। আমি আমার মেয়ের জন্য গর্বিত।
আগামী দিনে হয়তো সমগ্র বাংলা তথা দেশ জ্যোতির জন্য গর্ববোধ করবে। তাকে দেখে লড়াই করার প্রেরণা পাবে।