নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– গোটা পৃথিবী জুড়ে এখন ভারতীয় দাবারুদের জয়-জয়কার। সম্প্রতি পৃথিবীর সেরা দাবারু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভারতবর্ষের দাবা খেলোয়াড়রা। সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে ও ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে দাবা খেলাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে গতকাল দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর এড়িসন রোডের বিধান ভবনে অনুষ্ঠিত হলো এক দিবসীয় প্রভাত কুমার মজুমদার ও গীতা মজুমদার মেমোরিয়াল চেস চ্যাম্পিয়নশিপ। দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ১২০ জন দাবা খেলোয়াড় এই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন। সকাল দশটায় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সূচনা হয় এই চেস চ্যাম্পিয়নশিপের। ৮ থেকে ৮০ সকল বয়সের দাবা খেলোয়াড়রা এদিন বিভিন্ন এজ ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণ করেন। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর সহ আসানসোল ও রানীগঞ্জের একাধিক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী-রাও এই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করে। মূলত ছটি রাউন্ডে এই খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।
শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে দাবা খেলা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে অভিভাবক ও খুদে পরুয়াদের মধ্যে। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামো না থাকার ফলে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের মেধাবী দাবা খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রতিভা সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরতে অক্ষম হচ্ছে। বেঙ্গল চেস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে বি ডি সি এ, ও ডি এস এ, এর যৌথ উদ্যোগে এই দাবা চ্যাম্পিয়নশিপটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সকল বয়সের দাবা খেলোয়াড়রা এদিনের এই চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা মূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
শিল্পাঞ্চলের বিশিষ্ট দাবা খেলোয়াড় মলয় মজুমদার বলেন, “দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের খুদে স্কুল পড়ুয়ারা এখন যেভাবে দাবা খেলা দেখাচ্ছে তাতে খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বের দরবারে তারা নিজেদের স্থান করে নিতে পারবে। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও দুর্গাপুরের দাবা খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে দিন দিন। আমি বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাতে চাই সেইসব খুদে পড়ুয়ার অভিভাবকদের যারা নিজেদের মূল্যবান সময় অতিবাহিত করে খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে দাবা খেলাকে জনপ্রিয় করার জন্য নিরন্তর প্রয়াস করে চলেছেন।”
এই চ্যাম্পিয়নশিপটিকে সুচারুর ও দক্ষ হাতে সামলেছেন বাংলার নামকরা দাবারু তপন দাশগুপ্ত । এই কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য ছিলেন দামোদর , অরুনাভ , মলয় , পঙ্কজ মন্ডল সহ আরো অনেকে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় চিকিৎসক নির্মলেন্দু দে মহাশয়। এই অনুষ্ঠানে অতিথি রূপে উপস্থিত ছিলেন জয়সূর্য ভট্টাচার্যী, তরুণ দাস, মনোজ সিংহ, অনিল নায়ার সহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগণ।
খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দ ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য একটি লাকি ড্র অনুষ্ঠানের ও আয়োজন করা হয়েছিল। ভাগ্যশালী পাঁচ অভিভাবক এদিন পুরস্কৃত ও সম্মানিত করা হয়। আগামী ডিসেম্বর মাসে আবার প্রভাত কুমার মজুমদার ও গীতা মজুমদারের স্মৃতি উদ্দেশ্যে সারা বাংলা চেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এই এক দিবসীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের অল ক্যাটাগরি চ্যাম্পিয়ন হলেন বিশিষ্ট দাবারু বিশাল বসাক। বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে ক্যাটাগরিতে দাবা খেলা হয়েছিল, সেই স্কুল ক্যাটাগরিতে দুর্গাপুরের ডিএভি মডেল স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়। এদিন দুর্গাপুর ডিএভি মডেল স্কুলের সকল কৃতি ছাত্র-ছাত্রীর হাতে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ইস্পাত নগরীর বিধান ভবন এদিন এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।