জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আউসগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান -: বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে সারাবাংলার মানুষ। বিভিন্ন প্যাণ্ডেলে বিরাজ করছে রকমারি থিম। আলোর মালায় সেজে উঠেছে সেগুলি। কার্যত মহালয়ার পর থেকেই রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠছে পুজো প্যাণ্ডেলগুলি। দেখলে বোঝা যাবেনা কয়েকদিন আগেই রাজ্যের একটা বড় অংশ জলমগ্ন ছিল।
ওদিকে পাশের গ্রামের বাসিন্দারা পুজোর আনন্দে মেতে উঠলেও আকাশের কালো মেঘের মত বিষণ্ণতা বিরাজ করছে আউসগ্রামের অমরপুর অঞ্চলের তপসিল জাতি-উপজাতি অধ্যুষিত পাশাপাশি দুই গ্রাম অমরপুর-আদুরিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের মনে। কারণ একটা সময় এখানে নিয়মিত দুর্গাপুজো হলেও আর্থিক কারণে এখন সেটা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ। একটা সময় বর্ধিষ্ণু ‘সাহা’ পরিবারের সৌজন্যে এখানে নিয়মিত দুর্গাপুজো হতো। পুজোর জন্য তারা দর্শনীয় মন্দির নির্মাণ করেন। ‘সাহা’ পরিবারের অস্তিত্ব না থাকলেও আজও মন্দিরটি স্বমহিমায় বিরাজ করছে। যাইহোক ‘সাহা’ পরিবার যাকে মন্দির সহ জায়গাটি ‘দান’ করে যান তিনি আর্থিক বা অন্যকোনো কারণে দুর্গাপুজো বন্ধ করে দেন।
এদিকে অন্যত্র ঠাকুর দেখতে গিয়ে চরম সমস্যায় পড়ে যায় এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা। তপসিল জাতির হওয়ার জন্য সেভাবে ঠাকুর দর্শনের অধিকার তাদের ছিলনা, অপমানিত হতে হতো। বড়রা এই অপমান সহ্য করতে পারলেও অবুঝ ছোটরা সেটা পারতনা। বিষণ্ন হয়ে তারা গ্রামে ফিরে আসত।
অমরপুরের বাসিন্দা সুদীপ্ত দত্তের উদ্যোগে ২০০৯ সাল থেকে কার্যত ভিক্ষা করে দুই গ্রামের সীমানায় পুনরায় শুরু হয় দুর্গাপুজো। মহাদেব বাউরি, জীবন বাউরি, নিশিকান্ত আঁকুরে, লেবু রুইদাস প্রমুখদের সঙ্গে মণ্ডপ সজ্জায় হাত লাগাত ছোটরা। গত বছর গ্রামের মেয়ে দীপা বাউরির আঁকা আল্পনা দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আর্থিক কারণে এবছর বন্ধ হয়ে আছে দুর্গাপুজো। এমনিতেই শ্রমজীবী মানুষদের পক্ষে চাঁদা দিয়ে দুর্গাপুজোর মত ব্যয়বহুল পুজো করা কষ্টকর, তার উপর ঘটে গ্যাছে এক অবাঞ্ছিত ঘটনা। বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত পুজোতে সরকারি অনুদান পাওয়া গেলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বঞ্চিত থেকে গ্যাছে এই গ্রামটি। ফলে এবার বন্ধ হয়ে আছে পুজো। এটা দীর্ঘস্থায়ী কিনা সেটা ভবিষ্যতে জানা যাবে।
সুদীপ্ত বাবু বললেন, পুজোর সময় অন্য জায়গায় যখন ঢাকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, বাসিন্দারা আনন্দ করছে তখন এখানে বিরাজ করছে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। দেখে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু আর্থিক কারণে পুজোর আয়োজন করা সম্ভব হয়না। এখন সরকার যদি গ্রামবাসীদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে তাহলে আবার গ্রামের মানুষ পুজোর সময় আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ পাবে। এরা সেই সুযোগ পাবে কিনা সেটা আগামী দিন জানা যাবে।
গ্রামের প্রতিটি মানুষের আশা রাজ্যের মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা দেবী হয়তো তাদের দিকে মুখ তুলে তাকাবেন। সেক্ষেত্রে তাদের গ্রামের বাসিন্দারা আবার পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ পাবে।