সৌমী মন্ডল, রাইপুর, বাঁকুড়া:- বাঁকুড়ার রাইপুরের চাঁন্দুডাঙ্গা গ্রামে রাজবংশের কুলদেবী মহামায়া ছাড়া আশেপাশের কোনো গ্রামে দুর্গাপুজোর প্রচলন ছিল না। ফলে গ্রামগুলি থেকে হাজার হাজার মানুষ পুজোর দিনগুলিতে বিশেষ করে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে ভিড় করেন মন্দির প্রাঙ্গনে। পুজোর আনন্দ উপভোগ করেন।
এখানে মা মহামায়া কোকোমুখা যেটি প্রকৃতপক্ষে দ্রাবিড়ীয় দুর্গামূর্তি। নেকড়ে মুখো দেবী ষড়ভূজা যিনি দু’হাতে একটা হাতি অর্থাৎ করিন্দাসুরকে মর্দন করে বধ করছেন। মূর্তির উচ্চতা আড়াই ফুট। মূর্তির দক্ষিণ তুঙ্গভদ্রা ও বামে সর্বমঙ্গলা বিরাজ করছেন।
প্রায় ৭ কোটি টাকা খরচ করে মন্দির কমিটির উদ্যোগে নবরূপে নির্মিত হচ্ছে মা মহামায়ার মন্দির। উচ্চতা হবে ১০৮ ফুট, থাকবে পাঁচটি চূড়া। কমিটির আশা দর্শনীয় এই মন্দির হয়ে উঠবে বাঁকুড়ার গর্ব। হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমনে গ্রামটি তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হবে, এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। কমিটির সূত্রে জানা যাচ্ছে নবরূপে এই মন্দির উদ্বোধন করা হবে ২০২৫ সালের ৩১ শে জানুয়ারি। ওই দিন অস্থায়ী মন্দির থেকে দেবী মা মহামায়াকে নবনির্মিত সুদৃশ্য মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হবে। তার তোড়জোড় চলছে জোর কদমে।
এলাকার বিশিষ্ট মানুষদের নিয়ে কমিটি তৈরি করে বছর পাঁচেক আগে নতুন মন্দির তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সকলেই আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।আর্থিক ও বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে মন্দির নির্মাণের কাজ ব্যহত হলে মন্দির কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ভক্তরা নিজেদের সাধ্যমত আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় মন্দির নির্মাণে যিনি স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কমপক্ষে ১৫ লক্ষ টাকা বা সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ দান করবেন তার হাত ধরেই নবনির্মিত মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করা হবে। সময় দেওয়া হয় নবমীর রাত পর্যন্ত।
মন্দির নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসেন সারেঙ্গা ব্লকের চিলতোড় গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী শক্তিপদ মহাপাত্র। নবমীর রাত মা শ্রীমত্যা দুখুবালা মহাপাত্র, স্ত্রী রেণুকা, দুই কন্যা সৌমিতা ও শম্পা, পুত্র শান্তি সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রয়াত পিতৃদেব বংশীবদন মহাপাত্রের স্মৃতিতে মন্দির কমিটির হাতে তুলে দেন ১২ লক্ষ টাকার চেক।
তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্দির কমিটির সম্পাদক তথা বিশিষ্ট উদ্যোক্তা শিক্ষক বীরেন্দ্রনাথ ঘোষ, সভাপতি পল্টু রজক, সদস্য বিশ্বজিৎ ঘোষাল সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা এবং পুরোহিতদের পক্ষে অশোক চ্যাটার্জী, শঙ্কর চ্যাটার্জী, শ্রীধর চ্যাটার্জী ও বহু সাধারণ মানুষ। প্রত্যেকেই শক্তিপদ বাবু ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং মায়ের কাছে তাদের মঙ্গল ও শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন।
শক্তিপদ বাবু বলেন, ৪০ বছর আগে আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি। সন্তান হয়েও আর্থিক কারণে সেদিন বাবার জন্য কিছুই করতে পারিনি। তাইতো সমাজসেবার মধ্য দিয়ে বাবার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আজ আমার যা কিছু হয়েছে সবই মা মহামায়ার আশীর্বাদে।
প্রসঙ্গত শক্তিপদ বাবু একেবারেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একজন সাধারণ মানুষ। ধীরে ধীরে সততা ও কঠোর পরিশ্রমকে পাথেয় করে আজ একটা জায়গায় পৌঁছেছেন। কিন্তু নিজের অতীতের কষ্টের দিনগুলোর কথা ভোলেননি। তাই নিজেকে সমাজসেবার কাজে নিযুক্ত করে সর্বদা সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন। এই ব্যাপারে তিনি মা, স্ত্রী সহ পরিবারের সদস্যদের পাশে পেয়েছেন।
মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে শক্তিপদ বাবু ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সম্পাদক বীরেনবাবু বলেন, আমরা গর্বিত এই মানুষটি মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য। ঘোষণা অনুযায়ী তিনিই আমাদের মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করবেন। পাশাপাশি অন্যান্য যারা মন্দির নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও দেবেন তাদের সবার কাছেও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যেহেতু এখনো মন্দির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হতে অনেক বাকি তাই সকলের কাছে নিজেদের সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।