সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ– উচ্চবর্ণের সম্ভ্রান্ত পরিবারের পুজোয় ওঁদের ঢুকতে দেওয়া হতো না। এই অবহেলা ও বঞ্চনা মানতে পারেননি ওঁরা। সিদ্ধান্ত নেন লক্ষ্মী পুজো করার। এমন এক লক্ষ্মী পুজো জাঁকজমকে যা দুর্গাপুজোকে হার মানায়। এমনই চমকপ্রদ ইতিহাস বাঁকুড়া শহরের নূতনচটিতে এলাকার ষোলআনা লক্ষ্মী মন্দির ও লক্ষ্মী পূজার। প্রায় দুই শাতাব্দী প্রচীন এই পুজো। এবার ১৮২ বছরে পদার্পণ করল।
বাঁকুড়া শহরের নূতনচটি এলাকায় বসবাস করেন চর্মকার সম্প্রদায়ের মানুষ। একসময় চামড়ার নানা জিনিস ও চটি জুতো তৈরি করাই ছিল ওঁদের পেশা। সেই সময় এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুর্গা পুজোয় ওঁদেশ প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। সেই দুঃখ ঘোচাতে সমাজের এই বৈষম্যের প্রতি চ্য়ালেঞ্জ ছুঁড়ে নিজেরাই পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন ওঁরা। তবে দুর্গাপুজো নয় লক্ষ্মী পুজোর। কিন্তু জাঁকজমকে যা দুর্গাপুজোকে হার মানাবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। নিজেদের সামান্য রোজগারের একটি এংশ মন্দির তৈরি ও পুজোর জন্য বাঁচিয়ে রাখতে শুরু করেন সম্প্রদায়ের সকলে মিলে। ক্রমে সৈই অর্থ দিয়েই তৈরি হয় বাঁকুড়া শহরের নূতনচটি এলাকার রুইদাস পাড়ার ষোলআনা লক্ষ্মী মন্দির। আর জাঁকজমকে এই পুজো দুর্গাপুজোকেও হার মানায়। এই বছর পুজোর বাজেট শুনলে অবাক হবেন। বাঁকুড়ার নতুনচেটিয়া রুইদাস পাড়ার এবারের লক্ষ্মীপুজোর বাজেট প্রায় দুই লক্ষ টাকা।
পুজো কমিটির সদস্য ভোলানাথ রুইদাস, চরণরাজ রুইদাসরা জানান, লক্ষ্মীপুজোয় দুর্গাপুজোর মতোই আনন্দ হয়। আত্মীয় পরিজনদের ভিড়ে ঠাসা থাকে বাড়ি। তবে এই পুজোর সমস্ত খরচ রুইদাস সম্প্রদায়ের মানুষ বহন করেন। বাইরে থেকে কোনও চাঁদা নেওয়া হয় না৷ যদিও পুজো কমিটির পক্ষ থেকে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষকে এই পুজোয় অংশ নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। পুজোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি থাকে নরনারায়ণ সেবার ব্যবস্থা। একসময় যাঁরা চর্মকারদের দুর্গা পুজোয় অংশ নিতে দিতেন না এখন তারাই সেই চর্মকারদের লক্ষ্মী পুজোতেই সাদরে আমন্ত্রিত।