নীহারিকা মুখার্জ্জী চ্যাটার্জ্জী, পূর্ব বর্ধমান:- মহাভারতের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন কৌরব ও পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণ অর্থাৎ দ্রোণাচার্য। ক্রীড়াক্ষেত্রে যেসব প্রশিক্ষক অসমান্য অবদান রাখেন তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কার দেওয়া হয়। ক্রীড়া প্রশিক্ষকদের জন্য এটি হলো সর্বোচ্চ পুরস্কার।
প্রধান শিক্ষক হিসাবে ধারাবাহিকভাবে অসামান্য অবদানের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে ‘দ্রোণাচার্য পুরস্কার-২০২৪’ পাচ্ছেন বর্ধমান রথতলা মনোহর দাস বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। এশিয়ার অন্যতম সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।
গত ৩০ শে সেপ্টেম্বর টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের ডিরেক্টর তাপস মুখার্জ্জী সাক্ষরযুক্ত একটি চিঠি এসে বিনায়ক বাবুর কাছে পৌঁছায় এবং এই তথ্য সামনে আসে। জানা যাচ্ছে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রথম বারের জন্য এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক ও বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক হিসাবে একশ জন শিক্ষক এই পুরস্কার লাভ করছেন। আগামী ১৪ই নভেম্বর সল্টলেকের সেক্টর-V টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ামে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। মনে করা হচ্ছে খেলাধুলার মত শিক্ষাক্ষেত্রে এটি হলো সর্বোচ্চ পুরস্কার। প্রসঙ্গত কিছুদিন আগে বিনায়ক বাবু রাজ্য সরকার প্রবর্তিত ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার লাভ করেন।
পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর বিনায়ক বাবুর শিক্ষক জীবন শুরু হয় গৃহশিক্ষক রূপে। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে নিজের যোগ্যতা ও ছাত্রদের প্রতি দরদের সাক্ষর রাখার পর ২০০২ সালে বর্ধমানের ইছলাবাদ হাইস্কুলে সহশিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। একটানা ১৭ বছর সেখানে থাকার পর ২০১৯ সালে গলসী উচ্চ বিদ্যালয় এবং ২০২১ সালে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসাবে বর্ধমানের রথতলা মনোহরদাস বিদ্যানিকেতনে যোগদান করেন এবং আপাতত এখানেই কর্মরত আছেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি একজন স্নেহশীল পিতা। তাইতো দ্যাখা যায় বাচ্চাদের মিড ডে মিলের ভাত মাখিয়ে তিনি তাদের মুখে তুলে দিচ্ছেন। ছাত্রছাত্রীরা বিনা প্রতিবাদে হাসিমুখে তার পরামর্শ মেনে নিয়ে বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করছে। মনখুলে নিজেদের সমস্যার কথা তার কাছে তুলে ধরছে। সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ের অনুপস্থিত ছাত্রদের খোঁজে তাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হচ্ছেন। নিজে দুর্ঘটনায় আহত হয়েও ইনচার্জ হিসাবে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিয়েছেন।
গুসকরা পুরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিনায়ক বাবু বর্তমানে বর্ধমানের রেনেসাঁ উপনগরীতে থাকেন। পিতা সুশান্ত ব্যানার্জ্জী অবসরপ্রাপ্ত গণিতের শিক্ষক। গৃহবধূ মা কণিকা ব্যানার্জ্জী সন্তানের জন্য নিজের অনেক শখ আহ্লাদ ত্যাগ করেন। উচ্চশিক্ষিতা হয়েও স্ত্রী সোমা দেবী সংসারের জটিলতা নিজের হাতে সামলে চলেছেন, শিক্ষক স্বামীর সাধনার পথে কোনো বাধা সৃষ্টি করেননি।
সন্তানের ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কার পাওয়ার খবর শুনে সুশান্ত বাবু খুব খুশি। তিনি বলেন, আমার সন্তান যেন এরকমই থাকে।
বিনায়ক বাবুর বর্তমান বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হলেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস। বিনায়ক বাবুর ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কার পাওয়ার খবর শুনে তিনি খুব খুশি। তিনি বলেন, উনি আমাদের গর্ব। আশাকরি উনার হাত ধরে একদিন এই বিদ্যালয় বর্ধমান শহরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ে পরিণত হবে।
সহযোগিতার জন্য সহকর্মী, স্নেহের ছাত্রছাত্রী, শুভানুধ্যায়ী, পরিবারের সদস্য সহ প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিনায়ক বাবু বলেন, ব্যক্তি হিসাবে স্বীকৃতি আমি পেলেও এই সাফল্য সবার। আজ আমি খুব খুশি। আজ যদি আমার দাদু, ঠাকুমা, বড়দা (মায়ের বাবা), বৌমা (দিদিমা) বেঁচে থাকতেন খুব আনন্দ হতো।