মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- দরকার ৩৩ বোর্ড সদস্য আর তার জন্য ময়দানে লড়তে এলেন মোটে ৮ প্রার্থী! শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরাও কি তবে গোপন কোনো কৌশলে সোমবার জমা করলেন না তাদের মনোনয়ন পত্র ?
নাকি, ধুঁকতে ধুঁকতে চলা রুগ্ন মহিলা ব্যাংকটির বোর্ড সদস্য হওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যাংকের হাজার হাজার সদস্য ?
অথচ, মনোনয়ন কক্ষের বাইরে সারাটাদিন ভিড় করে ব্যাংকের গেট রুদ্ধ করে রেখেদিলেন অন্ততঃ ৫০০ যোগ্য সদস্য ? কেনো ? এ যেন ‘নিজেও যাবো না, পথও ছাড়বোনা!’ এরা সকলেই নাকি শহরের মহিলা তৃণমুল কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য।
এই ব্যাংকে শেষ নির্বাচন হযেছিল ২০১২ তে। যখন ভোটের দিন শাসকের পেশীর দাপটে গালে সপাটে চড় খেতে হযেছিল বাম সংসদ, শিক্ষক সাইদুল হক কে, আর দেয়াল টপকে পালিয়ে মারের হাত থেকে বেঁচেছিলেন সিটিসেন্টারের সিপিএমের নেতা শ্যামা ঘোষ। ঘটনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর দলকে ঘিরে নিন্দার ঝড় ওঠে। এবার আর জি কর কান্ডের জেরে কি তবে স্ট্র্যাটেজি বদলে এবারে ভোটের আগেই কৌশলে পথ আগলে বাজি জিতে নিতে চাইছে শাসক শিবির ?
দক্ষিণবঙ্গের একটিই মাত্র মহিলা শাসিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই দুর্গাপুর মহিলা সমবায় ব্যাংক, গত ২৬ বছরে যার একটিই মাত্র শাখা শহরের সিটিসেন্টারে। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ব্যাংকটি সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা নিট মুনাফা করেছে। অর্থাৎ সদস্য পিছু এক বছরে লভ্যাংশ প্রাপ্তি ২২৫ টাকা। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে যেচে গর্দান জিম্না দিয়ে বদনামের ভাগী হতে চাওয়া লোক কি সত্যিই মেলা ভার! নাকি, নাক গলাতে চাওয়া লোকেদের মাথা ঘুরিয়ে অন্য দিশায় বিদেয় করে দিচ্ছে শাসকের রণচন্ডি দাপুটে প্রমীলা বাহিনী, যারা ঘর গেরস্থালি ভুলে সোমবার দিনভর হত্যে দিয়ে পড়ে রইল সিটিসেন্টারের ওই ব্যাংকটির সিংহদুয়ার আগলে! আজ মঙ্গলবার মনোনয়নের শেষ দিন। রাজনৈতিক মহলের অনুমান – ছবিটা বিশেষ বদলাবে না এদিনও।
“একটু বদল তো হবেই। দুপুর ২ টোর পর দেখবেন মনোনয়ন জমা পড়ল ৩৩ টি আর সবই শাসকের পক্ষের,” উদাস গলায় আক্ষেপ বাম পক্ষের মনোনয়নকারী সুজাতা ঘোষের। তিনি সোমবার হাজার চেষ্টাতেও মনোনয়ন কক্ষেই যেতে পারেননি, বলে তার দাবি। বললেন, “ওরা সব ঘিরে ফেলেছে। উঠতেই দিচ্ছেনা অন্য কাউকে।”
বাম জমানায় ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে পথচলা শুরু দুর্গাপুর মহিলা সমবায় ব্যাংকের। ওই ব্যাংকের সব কর্মী আর ৬৫০০ অংশীদার সদস্যর সকলেই মহিলা। গত ২০১২ অব্দি ব্যাংকের বোর্ডে টানা ১৪ বছর বাম শাসন কায়েম ছিল। গত ভোটে বোর্ডের রঙ বদল হয়। তারপর ২০১৭’র কুখ্যাত পুরভোটের লজ্জায় এই সমবায় ব্যাংকটিতে আর ভোটের ঝুঁকি নেয়নি জিতেন তিওয়ারির টিএমসি। বর্তমানের বিজেপি জিতেন তখন শাসক টিএমসি’র ডাকাবুকো জেলা সভাপতি।
“২০১৭ তেই শেষ হয় আমাদের বোর্ডের মেয়াদ। তারপর একজন প্রশাসক ছিলেন, তিনিও এবছর ফেব্রুয়ারিতে চলে গেছেন। এখন আমাদের বোর্ডও নেই, প্রশাসকও নেই, ম্যানেজারও নেই। ভোট হলে নতুন বোর্ড এসে ব্যাংককে ঢেলে সাজাবে বলে আমরা দারুন আশায় আছি,” বললেন ব্যাংকের একাউন্টেন্ট রূপা ব্যানার্জী। তিনিই এখন ছোট্ট ওই ব্যাংকটির ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
সোমবার দুর্গাপুরের সমবায় পরিদর্শক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “এদিন মাত্র ৮ টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। কাল শেষ দিনে যথেষ্ট মনোনয়ন পড়বে, আশা করি।”
ভোটকে ঘিরে দারুন সক্রিয় শাসক শিবির। তৃণমুল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা একটি দারুন চিত্তাকর্ষক ভোটের অপেক্ষায় আছি। দলের পক্ষে এটির দায়িত্বে আছেন জেলা সভানেত্রী অসীমা চক্রবর্তী। তিনিই প্রস্তুতি নিয়ে যা বলার বলবেন।” যদিও, অসীমা এদিন এবিষয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি। এদিকে, তৃণমূলের দাপাদাপিতে সিপিএমের মুখেও রা ছিলনা সোমবার। দলের জেলা নেতারা আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকলেও, সামনে আসার সাহস করেননি কেউই। অনেক ভারী নেতাই এদিন হয় জেলা সিটু অফিসে বা বিমল দাশগুপ্ত ভবনের এরিয়া অফিসের গোপন কক্ষে চুপিচুপি লাল চা আর মুড়ি খেয়েছেন নিরাপদে বসে।