জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, পূর্ব বর্ধমান -: বিজ্ঞান বেগ দিলেও কেড়ে নিয়েছে আবেগ। গতির যুগে মানুষের ধৈর্য্য গ্যাছে কমে। আনন্দ উপভোগের জন্য পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র দেখার আগ্রহ তাদের মধ্যে দ্যাখা যায়না। ফলে এখন কার্যত পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র সেভাবে তৈরি হয়না। এদিকে প্রকৃতিও শূন্যস্থান পচ্ছন্দ করেনা। তাই একটা বাস্তবধর্মী শক্তিশালী কাহিনী ও সামাজিক বার্তাকে হাতিয়ার করে সেইস্থান পূরণ করতে এগিয়ে আসে স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাতারা। তৈরি হতে থাকে একের পর এক স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। নির্মাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবেরও আয়োজন করা হয়।
গত ১৭ ই নভেম্বর বর্ধমান মহারাজাধিরাজ উদয়চাঁদ উইমেন্স কলেজের IQAC এবং গণজ্ঞাপন ও সাংবাদিকতা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে কলেজের এপিজে আব্দুল কালাম অডিটরিয়ামে আয়োজিত হয় এক দিবসীয় স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসব। উৎসবে মোট ২১ টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে ১২ টি ছবি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
ছবির পরিচালক, কলাকুশলী, প্রযোজক ছাড়াও ফিকশন, নন-ফিকশন ও তথ্যচিত্র ভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলি দেখতে ভিড় হয় যথেষ্ট।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আগ্রহী দর্শকরা ভিড় করে হলে। প্রতিটি ছবির শেষে করতালি দিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট ছবির সঙ্গে যুক্তদের করতালি দিয়ে অভিবাদন জানান। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উৎসবের শেষে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সম্মাননা জানানো হয়। সেরা ফিকশন হিসাবে ‘মায়ভূমি’ এবং সেরা তথ্যচিত্র হিসাবে ‘let there be light’-কে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতা পর্বের বিচারক ছিলেন FIPSESCI এর সাধারণ সম্পাদক প্রেমেন্দ্র মজুমদার, পরিচালক ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক মানস ঘোষ।
স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা কলেজের টিচার ইনচার্জ মল্লিকা সেনগুপ্ত, প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকৃতি ঘোষাল, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আধিকারিক ষোড়শী মোহন দাঁ, বিশিষ্ট নাট্যকার দেবেশ ঠাকুর প্রমুখ।
বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক বাপ্পাদিত্য দাঁ বলেন, স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবে আমরা বরাবর ভালো সাড়া পেয়ে আসছি। তরুণ পরিচালকরা যেভাবে ছবি তৈরি করতে এগিয়ে আসছেন তা খুবই আনন্দের।
অন্যদিকে বর্ধমান মহারাজধিরাজ উদয়চাঁদ মহিলা কলেজের গণজ্ঞাপণ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ঋষিগোপাল মণ্ডল বলেন, মাস কমিউনিকেশন সাবজেক্টে ফিল্ম প্রোডাকশন ডকুমেন্টারি তৈরি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। কুশলী পরিচালকদের ফিল্মের পাশাপাশি কলেজ ছাত্রীদের তৈরি কিছু সিনেমাও প্রশংসার দাবি রাখে। বর্ধমান চলচ্চিত্র চর্চা কেন্দ্রের এই উদ্যোগ নবীন ফিল্ম নির্মাতাদের উৎসাহিত করবে। এমন উদ্যোগ আরও বেশি করে হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র তৈরিতে যেভাবে সাড়া মিলেছে সেটা সত্যিই অভূতপূর্ব। আশা করা যায় আগামীদিনে এদের হাত ধরে আরও ভাল ভাল স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে যেটা চলচ্চিত্র প্রেমীদের মনের স্বাদ পূরণ করবে।