সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- বর্তমানে প্রায়শই ফেসবুক বা অন্য কোন মাধ্যমে দেখি অনেকেই বড় বড় রিল করছেন এবং তারা বলছেন, কত লোক গাড়ি বাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কপাল খারাপ তাই গরীব ঘরে জন্মগ্রহণ করেছি! অনেকেই আবার বলেন, অনেক পূণ্য করলে ধনী গৃহে জন্ম হয়। সত্যি কি গরীবের গৃহে জন্মগ্রহণ করা মানেই পূর্বজন্মের পূন্যের ভাড়ার শূণ্য এমনটা বোঝায়?
সনাতন ধর্মে বলা হয় যে, মানুষ যখন ভালো কর্ম করেন তার ফলস্বরূপ তিনি যদি একজন্মে মোক্ষ প্রাপ্তি না হন তাহলে তিনি পরের জন্মে খুব ভালো বংশে ধনী ঘরে জন্মগ্রহণ করেন ,যাতে পরবর্তী জন্মে তার সাধন মার্গে কোনও বাধা না আসে। সনাতন ধর্মে একটি কথা বারংবার বলা হয় যে, যদি কেউ ধর্ম পথে এতটুকুও পা বাড়ায় তবে সেই পা বাড়ানোটাও তার নিষ্ফল হবে না পরবর্তী জন্মে সেখান থেকে তার ফল লাভ হবে এবং সেখান থেকেই সে এগিয়ে যাবে।
এই প্রসঙ্গে একজন ভক্ত স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজকে জিজ্ঞেস করেন,‘ রামপ্রসাদ ও বামাক্ষ্যাপার মত উচ্চ আধ্যাত্মিক স্তরের সাধক কেন গরীব ঘরে জন্মেছিলেন? তারা পৃর্বজন্মে নিশ্চয়ই তীব্র তপস্যা করেছিলেন, অর্থাৎ অনেক পুণ্য করেছেন। তা সত্ত্বেও তাদের দরিদ্র পরিবারে কেন জন্মাতে হল?’
এই প্রশ্নের উত্তরে স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলেন, ‘এঁনারা জন্মের সময় এমন ঘর পরিবার বেছে নেন যেখানে নিজের সাধনাকে এগিয়ে নেবার সুযোগ বেশি পাবেন। আর্থিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে ভাবেন না। ঠাকুরের কথা,‘ ঈশ্বর কল্পতরু, তবে চাইতে হয়।’ এজন্যই পুজোর আগে সঙ্কল্প করার নিয়ম। উচ্চস্তরের সাধক শুধু তপস্যার সুযোগ চান। অর্থ বা সম্পদের ইচ্ছা তাদের কাছে বাধা। কারণ শেষে নির্বাসনা হতে হবে আর যেহেতু তারা সম্পদ চাননি সেজন্য পরজন্মে তাদের অনেকেই সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।’
এখন এই প্রশ্নের উত্তর থেকে আরও দুটো বিষয় পরিষ্কার বোঝা যায়, সেটা হল দারিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা কিন্তু অভিশাপ নয় বরং এই পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে প্রতিভার বিকাশ এবং সাধন শক্তির বিকাশ ঘটে থাকে। তাই গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেই সে পূর্ব জন্মে পাপ করেছে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই! হতে পারে তাকে অর্থের অভাব বোঝানো হচ্ছে যাতে সে অর্থের নিষ্ফলতা উপলব্ধি করে পরমার্থকে অনুভব করতে পারে।