মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: তৃণমূলের ‘মাথায় বেল ভেঙে’ এবার উৎসব খেলায় মেতেছেন শহরের ব্যবসায়ীরা, আর তাদের মধ্যমণি রাজ্যের এক প্রবীন মন্ত্রী – যা নিয়ে ইদানিং বিস্তর শোরগোল শহর দুর্গাপুর জুড়েই।
চাঞ্চল্য ঘাসফুল পার্টির অন্দরেও, কারণ, এবারের এতো স্রেফ একটা উৎসব নয়, এই উদ্যোগের নেপথ্যে লুকোনো রয়েছে পেশী আস্ফালনের গোপন বাসনা – কে বড় হনু, কে বামন – যেন তা নির্ধারণের রাসমঞ্চ দুর্গাপুর উৎসব মেলা ময়দান!
কিন্ত, দশদিনের ২০২৪ দুর্গাপুর উৎসবের আয়োজনে ময়দানবের কর্মযজ্ঞের যে সংসার পাতা হবে তার গোড়ায় গলদ। প্রায় থমকে গেছে আয়োজন, কারণ উৎসবের তাঁবু, ছাউনী পাতার সূচনাতেই এখন ধারের গেরোয় ফেঁসে গেছেন উদ্যোক্তারা। ময়দানে যারা ছাউনী পাতার বিশ্বকর্মা,তারাই এখন বেঁকে বসেছেন পুরোনো ধার উসুলের দাবিতে।
পশ্চিম বর্ধমান ডেকোরেটরস সমন্বয় সমিতি বুধবারই চিঠি দিয়ে দুর্গাপুর উৎসবের সম্পাদককে সাফ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন – যতো দ্রুত সম্ভব বকেয়া টাকা মিটিয়ে না দিলে সমস্যা হবে এবারের উৎসবে আয়োজনে। যা নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে ‘দুর্গাপুর উৎসব – সিজন টু’ র উদ্যোক্তা কর্তাব্যক্তিদের। এবারের উৎসবের সূচনা ৬ ডিসেম্বর, আর চলবে ১৫ ডিসেম্বর অব্দি।
কতো টাকা ধার? যা নিয়ে এমন ধমকি বাঁশ কাঠের খাঁচা তৈরীর কারিগরদের?
গত ডিসেম্বরে ১৫ দিনের উৎসবে রাজীব গান্ধী মেলা ময়দান মস্ত ছাউনীতে ঢাকা পড়েছিল। ভরা শীতে জেল্লাদার ওই ঢাউস ছাউনীতে আমেজে বসে রাজা উজির মেরেছেন, ছক কষেছেন রাজ্যের নেতা মন্ত্রী সান্ত্রী বেলচা আর বেওসায়ীরা। বছর ঘুরে গেলে ফের মস্তির আয়োজনে মস্ত নগরের নতুন প্রভুরা। কিন্তু, বারো মাসেও বকেয়া কানাকড়িটিও পাননি অনিমা ডেকোরেটর্সের কর্ণধার মৃণাল জেসু। তিনিই সেই মেগা প্যান্ডেলের কারিগর। দুর্গাপুর উৎসব কমিটি নাকি তার প্রাপ্য ২৪ লক্ষ টাকা এদিন অব্দি দেয়নি। সেই ‘কাজ ফুরোলে পাজি ‘ মৃণাল এখন হাহুতাশ করছেন মেলা ময়দানের পানে উদাস চেয়ে।
শুধুই কি অনিমা ডেকোরেটর্সের টাকা বাকি? নাকি টাকা বকেয়া রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি সংস্থার? সূত্র মারফত জানা গেছে গতবারের ২০২৩ দুর্গাপুর উৎসবের মূল মঞ্চের সামনে যে লোহার কাঠামো তৈরি করেছিল যে সংস্থা,তারও নাকি লক্ষাধিক টাকা এখনো বকেয়া। দুর্গাপুর উৎসব ২০২৩ কে সারা পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত করার উদ্দেশ্যে যে সংস্থাকে ফেসবুক লাইভ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তারও নাকি রয়েছে বিপুল অংকের টাকা বকেয়া।
আবার, ওই মৃণালের কাছেই ফের ম্যারাপ বাঁধার হুকুম জারি করেছেন শহরের ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ, মৃণাল প্যান্ডেল বাঁধতে গররাজি হলে, তাকে নাকি বণিকদের হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে। কারণ, গত বারের মতো এবারেও উৎসবের মূল পান্ডা বাহুবলী কবি দত্ত আর মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। কবি এখন আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান। তাই, তেনার ক্ষমতা অসীম আর তার চেয়েও বেশি দঢ় তার পাশে পাশে ঘুর ঘুর করা দু চার পিস কঞ্চি, যাদের মুখে খই ফোটে, পেটে ষড়যন্ত্রের গভীর জাল! ডেকে ডেকে নাকি দেড় লাখ টাকা জমা রাখার হুমকি দিচ্ছেন একে তাকে।
সেই ভয়ে শহরের কিছু ব্যাবসায়ী সিঁটিয়ে গেলেও, মৃণাল অবশ্য লড়ে গেলেন বুক চিতিয়ে। তার সাথ দিচ্ছেন ডেকরেটরস সমন্বয় সমিতির যুগ্ম সচিব উৎপল রায়চৌধুরী। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন উৎসব কমিটিকে, পুরোনো হিসাবের ফয়সালা না হলে কাজ এগুবেনা একচুলও। তাই, বৃহস্পতিবার গড়িয়ে গেলেও, একটি বাঁশও পড়েনি ময়দানে।
তাহলে সমস্যার কি সমাধান?
“ধার করে ঘী খেতে খেতে অতিমানবের মুখোশ পরা বেড়াল নিজেকে কখনো কখনো বাঘ ভাবে, তবে আয়নাকে ডর করে। এরা আয়নার সামনে দাঁড়াতে ভয় পায়। এবার পেল্লাই আয়না এনে এদের মুখের ওপর ধরবো,” বক্তব্য ডেকরেটর সমিতির। কি বক্তব্য উৎসব কমিটির?