সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- ধর্ম আসলে তাই যা ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগে। ধর্ম শুধুই বইয়ের পাতায় লেখা বিদ্যা নয়, শ্মশানের, রাজদ্বারে, সমালোচনায়, শত্রুপুরীতে কেমন আচরণ করা উচিত তাই আমাদেরকে শেখায় সনাতন ধর্ম। অনেক সময় শোকের বাড়িতে গীতা পাঠ করা হয় মানুষের মন শান্ত করার জন্য, স্বর্গত আত্মার শান্তি লাভের জন্য। কিন্তু যার নিকট আত্মীয় মারা গিয়েছেন তিনি কি সেই মুহূর্তে গীতার বাণী উপলব্ধি করতে পারেন? শোকের হাহাকারে ভেঙে পড়া কোনও ব্যক্তির পাশে ঠিক কীভাবে দাঁড়ানো উচিত? সনাতন ধর্ম সে কথাও বলে দেয়।
একবার একজন ভক্ত স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এক শিশু মারা গেলে তার মাকে কীভাবে শান্ত করা যায়? কারণ তখন তো ধর্ম ঈশ্বর সব উড়ে যায়, শুধু থাকে মায়ের তীব্র হাহাকার।’এর উত্তরে
স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলেন,“ এ সময় যুক্তি দিয়ে কথা বলে লাভ নেই। তার হাত ধরে পাশে বসে থাকুন। মনে মনে তার উদ্দেশ্যে বলতে থাকুন ‘তোমার দুঃখ কমে যাক … তুমি শান্ত হও …শান্ত হও …দুঃখ কমুক …।এভাবে ৫-৬ মিনিট বলতে থাকুন তার উদ্দেশ্যে মনে-মনে।’
মহারাজ আরও বলেন , “এখন তার মন অশান্ত থাকবে। ধর্ম বা ঈশ্বর নিয়ে তার মন্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু প্রার্থনা করুন বা মনে মনে তার উদ্দেশ্যে বলতে থাকুন। এই সময় তার কাছে আপনি না থাকলেও দূর থেকে বলতে পারেন।”
এরপর মহারাজ বলেন শিশু বয়সে মৃত্যু মানেই কিন্তু সেটা খারাপ নয়, অনেক সময় দেখা যায় যে মৃত্যু পিছনে অনেক কল্যাণকর ভূমিকা থাকে। মহারাজ এই প্রসঙ্গে বলেন,“ শিশুবয়সে মৃত্যু হলেই যে সেটা খারাপ তা নয়। অনেক সময় মানুষ জন্মায় সামান্য কর্ম ভোগের জন্য। খুব তাড়াতাড়ি প্রারব্ধ ভোগ করে ফিরে যায়। এমন শিশু প্রবল পুণ্যফলে পৃথিবীতে এসে চলে যায়। মহাভারতে এর উল্লেখ রয়েছে। ভীষ্মের আগে ৭ পুত্রকে গঙ্গা জন্মের পরেই নদীতে বিসর্জন দিয়ে তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন এই কথা ঐ ভদ্রমহিলাকে বলে লাভ নেই। তার জন্য প্রার্থনা করুন শুধু।”