মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: খুঁটি পুজোতেই নতুন উৎসব কমিটিকে রবিবার সকাল সকাল ধমকে সচেতন করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে পাশে বসিয়ে প্রায় বিনা মেঘে বাজের মতো গর্জন করে উঠলেন নরেন্দ্রনাথ। এক ঢিলে নয়, খুঁটি পুজোর মঞ্চে সকলের কাছে অপ্রত্যাশিত ভাবেই দফায় দফায় উৎসবের নতুন পরিচালকদের ওপর তিনি যে বেজায় বিরক্ত, তা ঠারেঠোরে এদিন বুঝিয়েও দিয়েছেন নরেন্দ্রনাথ। তিনি এদিন হঠাতই বলে ওঠেন, “এটা কারো ব্যাক্তিগত উৎসব নয়। এটা জনগণের উৎসব।” ঠিক যেমন এদিনই ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী (দেব) স্থানীয় নেতা শংকর দলুইকে ঘষে দিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন – শিশু উৎসব জনগণের, করো ব্যাক্তিগত নয়!
তৃণমূলের এই জেলার সেনাপতি এদিন হঠাতই ‘ব্যাক্তিগত উৎসব’ প্রসঙ্গ টানায় অস্বস্তিতে পড়েন মঞ্চে উপস্থিত মন্ত্রী থেকে উৎসবের আয়োজক কর্তাব্যক্তিদের অনেকেই। কেউ কেউ কার্যতঃ মুখ লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নরেন্দ্রনাথের মেজাজের আগাম আঁচ পেয়ে গিয়ে কেউ কেউ হঠাতই এদিন ‘অসুস্থ হয়ে ‘ আর খুঁটি পুঁততে ময়দান মুখোই হননি। অথচ, এদিন সন্ধ্যায় তাদেরকে বনিকসভার দপ্তরে হাজিরা দিতে দেখা গেছে। খুঁটি পুজোয় নরেন্দ্রনাথের রুদ্রমূর্তি দেখে গুটিয়ে যান মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারও। এদিন ভালো করে তার মুখে আর কথা সরেনি।
তবে, এসবে থেমে না থেকে নরেন্দ্রনাথ আয়োজক বণিকসভাকে এদিন আরো কড়া নিদান দিলেন – হিসাবকিতাবের আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। গতবারের প্যাণ্ডেলের বকেয়া ২৪ লক্ষ টাকা সহ আরো কিছু প্রাপকের ৫ লক্ষ টাকা একবছরেরও না মিটিয়ে, ফের ‘নতুন বোতলে পুরোনো মদ’ ঢেলে বণিকদের হাতে উৎসবের এই আয়োজন গোড়া থেকেই বিতর্ক উস্কে দেয়। যার জেরে রাজ্যের ডেকরেটর ব্যবসায়ীরা ‘দুর্গাপুর উৎসব সিজন – টু’তে কাজ করতে অস্বীকার করেন। সেই মর্মে তারা বিভিন্ন স্তরে চিঠিও পাঠান। সিঁদুরে মেঘে ঢেকে যায় সাধের উৎসবের রাজীব গান্ধী মেলা ময়দান। পরিস্থিতিতে প্রমাদ গোনে উৎসবের নতুন কমিটি। তড়িঘড়ি আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান কবি দত্তর হোটেলে পাওনাদার মৃণাল জাসুকে ডেকে তার বকেয়ার ব্যাপারে রফা করে কমিটি। কবি নিজে গতবারের মতো এবারও উৎসবের প্রাণভোমরা। যদিও, খুঁটি পুজোয় তিনি নিজেই এদিন অনুপস্থিত ছিলেন অজানা কারণে। তখনই, হিসেবের গরমিল আঁচ করেই হোক বা পাওনাদারদের ওপর জুলুম রুখতে নরেন্দ্রনাথ এদিন আলাদা একাউন্ট খোলার হুকুম দিলেন? তিনি বলেন, “আমাকেও কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমি যেহেতু কমিটির চেয়ারম্যান, তাই আমি শুধুমাত্র ওই অলংকারীক রাষ্ট্রপতির মত পদ নিয়ে বিল সই করার কাজটি করব না। উৎসব কমিটির স্বচ্ছতা রাখার জন্য আমি চাইবো চেম্বার অব কমার্সের নামে আলাদা করে ব্যাংক একাউন্ট করা হোক।” গতবারের উৎসবে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে পাশে নিয়ে এই নরেন্দ্রনাথই কিন্ত ছিলেন প্রাণপুরুষ। এবারে তাকে কবি দত্তরা যেমন পাশকাটিয়ে চলতে চাইছিলেন, তিনিও তেমনি আড়ালে আবডালে থেকেই নজর রাখছিলেন। কমিটি ঘোষণার দিনও অনুষ্ঠানে যাননি নরেন্দ্রনাথ। তৃণমুল কংগ্রেসের একটি সূত্র মোতাবেক, ‘অনেকেরই ধারণা ছিল সোমবার কলকাতায় দলের প্রস্তাবিত রদবদলে সম্ভবতঃ সভাপতির পদ থেকে নরেন্দ্রনাথকে সরিয়ে দুর্গাপুরের স্টার ব্যাবসায়ী কাউকে মধ্যমণি করে বীরভূমের কায়দায় কোর কমিটি দিয়েই দল চলবে পশ্চিম বর্ধমানে। তাই তারা ভাবে, নরেনকে আর বাড়তি ওজন দেওয়ার দরকার নেই।’
তার আর এখনই কোনো সম্ভাবনা যে নেই তা বুঝেই এবার অনেকেই হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেছেন, বলে সূত্রটি জানায়। তার নিজের ওজন যে আদৌ হালকা হচ্ছেনা, সেটা বোঝাতেই এদিন নরেন রীতিমত হুংকার ছাড়েন খুঁটি পুজোর ময়দানে।
কবি আবার মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর গুড বুকে থাকা একজন রেপুটেড ব্যবসাদার কাম জেলার অন্যতম প্রশাসক। নেতা, মন্ত্রীদের চেয়েও তার নামটা অনেক ভারী এখন, কারণ – তার কথাই নাকি এখন কলকাতায় চলে! তাই, রাজ্যের বরিষ্ঠ মন্ত্রীও অভিজ্ঞতা, বয়স ভুলে এখন নাকি তারই অনুগামী, বলে তৃণমুলের ভেতরে বাইরে চর্চা। সেই কবির পরাক্রমেও নরেন এদিন হঠাৎই তার ঝাঁঝ বাড়িয়ে দেওয়ায় উৎসবের নতুন ইজারাদারেরা যে বেশ চিন্তায়, এদিন বনিকসভায় তাদের বডিল্যাঙ্গুয়েজেই তার আঁচ পাওয়া গেছে।