সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারীর পর থেকেই পশ্চিম বর্ধমান জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে বিভিন্ন দুর্নীতি ক্ষেত্রে ধরপাকড়। আসানসোলের জমি মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে পুলিশি অভিযান । এবার আসানসোল পুরনিগম এলাকায় পুকুর ভরাটের অভিযোগে দুই থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেন তিন জমি ব্যবসায়ী। ধৃতদের বিরুদ্ধে ডব্লুবিআইএফ আইনের ( ওয়েষ্ট বেঙ্গল ইনল্যান্ড ফিসারিজ এ্যাক্ট, ১৯৮৪) ১৭/এ নং ধারায় মামলা করেছে পুলিশ।
পুকুর ভরাট করে বেআইনি জমি প্লটিং ও বিক্রির অভিযোগে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ বুধবার রাত দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতরা হলো আসানসোলের বাসিন্দা তাপস নন্দী এবং কাজোড়ার চন্দন শর্মা। অন্যদিকে, অন্য একটি ঘটনায় একই অভিযোগে বুধবার রাতে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ মুন্না সাউ নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার ধৃত তিনজনকে আসানসোল আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তিনজনেরই ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, দুটি ঘটনাতেই দুটি এলাকার বাসিন্দারা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায় ও পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নাবলমের কাছে পুকুর ভরাট করা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই মতো আসানসোল পুরনিগমের তরফে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের কাছে এইসব অভিযোগের সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। সেই মতো ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর তদন্ত করে জানায় যে, অভিযোগ সঠিক। দুজায়গাতেই পুকুর ভরাট করা হয়েছে। সেই মতো পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়াররা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গত ২২ জুলাই আসানসোল পুরনিগমের ৫ নম্বর বোরো অফিসের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রজিৎ কোনার আসানসোল পুরনিগমের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশডিহা মৌজায় পলাশডিহা গ্রামে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে বলে আসানসোল উত্তর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে নির্দিষ্ট করে ২৯ জনের নাম বলা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ২১ জনের নামে পুলিশ এফআইআর করে। সেই মামলার তদন্তের জেরে বুধবার রাতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ চন্দন শর্মা ও তাপস নন্দীকে গ্রেফতার করে।
একইভাবে, গত ২৬ ডিসেম্বর আসানসোল পুরনিগমের ৪ নম্বর বোরো অফিসের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার কাজল গোস্বামী আসানসোলের এনএস রোডে একটি পুকুর ভরাট করার অভিযোগ দায়ের করেন আসানসোল দক্ষিণ থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা করে তদন্তে নামে পুলিশ। সেই তদন্তেই বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয় মুন্না সাউকে।
প্রসঙ্গতঃ, এর আগে অন্য একটি পুকুর ভরাটের মামলায় দিনেশ গরাই এবং উইলসন নামে দুজনকে দিন কয়েক আগে গ্রেফতার করেছিলো আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে বাইরে রয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, শহরে পুকুর ভরাট করে প্লটিংয়ের মাধ্যমে জমি বিক্রির একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই চক্র শুধু পরিবেশ ধ্বংস করছে না, পাশাপাশি বেআইনি জমি বেচাকেনার মাধ্যমে সরকারের রাজস্বেও বড় ধাক্কা দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। পুরবাসীদের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পর অবশেষে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন নড়ে চড়ে বসলেও এই বেআইনি কারবারে লাগাম টানতে পারে কিনা এখন সেটাই দেখার।