নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান:- সাতসকালেই বর্ধমানের লস্করদিঘী পূর্ব পাড় এলাকায় এক দর্জির বাড়িতে ইডির হানাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো। ওই দর্জির নাম মইনুল হাসান মল্লিক ওরফে হাসান আলি। মঙ্গলবার সকাল প্রায় ৭টা নাগাদ ইডির ৪-৫ জন আধিকারিক কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সাথে নিয়ে অভিযান চালায়। এদিন সকালে মিনিস্ট্রি অফ ফিনান্স লেখা তিনটি গাড়িতে ৪-৫ জন আধিকারিক কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আসেন হাসান আলির বাড়ি। জানা গেছে, হাসান আলীর টেলারিং এর ব্যবসা থাকলেও তিনি কাজের জন্য বেশ কিছু দিন কাতারে ছিলেন। বছর দেড় দুই আগে তিনি এখানে এসে টেলারিং এর ব্যবসা শুরু করেন। উল্লেখ্য, হাসান আলি “আবাস যোজনা”য় বাড়ি পেয়েছেন। সেই বাড়িতেই এদিন ইডি হানা দেওয়ায় গোটা এলাকায় কৌতূহল চরমে ওঠে। সকাল ৭টা থেকে এদিন বিকাল প্রায় সাড়ে ৪টে পর্যন্ত ইডির অফিসাররা একাধিক বিষয় জানতে চান হাসান আলির কাছে। পরে তাঁরা বেড়িয়ে যান। পরে হাসান আলি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি কাতার থেকে ফেরার পর এখানে ব্যবসা করলেও ফের বিদেশে যাবার পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁর সঙ্গে কলকাতার দক্ষিণেশ্বর এলাকার সুকান্ত ব্যানার্জ্জী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয়। তার মাধ্যমেই তিনি বাইরে যাবার পরিকল্পনা করছিলেন। হাসান আলি জানিয়েছেন, গত ২১ নভেম্বর ওই সুকান্তবাবু তাঁকে জানান, তার একাউণ্ট থেকে টাকা তোলার সীমা অতিক্রম করে যাওয়ায় তিনি টাকা তুলতে পারছেন না। সেজন্য সুকান্ত ব্যানার্জ্জী হাসান আলিকে অনুরোধ করেন, তাঁর একাউণ্টে ১০ লক্ষ টাকা অনলাইনে পাঠালে তিনি যেন নগদে তা তুলে সুকান্ত ব্যানার্জ্জীর পাঠানো লোকের হাতে সেই টাকা দিয়ে দেন। হাসান আলি জানিয়েছেন, ১ বছর ধরে সুকান্তবাবুর সঙ্গে তার আলাপ হয়েছিল। তিনি যতটুকু জানেন, তাতে সুকান্তবাবু বিভিন্ন লোক পাঠান কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায়। হাসান আলি জানিয়েছেন, ২১ নভেম্বর অনলাইনে তার একাউণ্টে ওই টাকা দেবার পর ওইদিনই তিনি বর্ধমানের ভাঙাকুঠি এলাকায় তার ইন্দাসল্যাণ্ড ব্যাঙ্কের একাউণ্ট থেকে ওই টাকা তুলে সুকান্তবাবুর পাঠানো লোকের হাতে ১০ লক্ষ টাকা তুলে দেন। হাসান আলি জানিয়েছেন, এর কয়েকদিন পরই তার একাউণ্ট বন্ধ করে দেয় ব্যাঙ্ক। প্রসঙ্গত, হাসান আলি জানিয়েছেন, তিনি ধারদেনা করে বাড়ি করেছেন। সেজন্য একটা কাজ খুঁজছিলেন। কলকাতায় সুকান্ত ব্যানার্জ্জীর কাছে যাবার জন্য তাকে ২ হাজার টাকা দিয়েছিল সুকান্ত বাবু। তবে ওই ১০ লক্ষ টাকা তুলে দেবার জন্য তাকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। হাসান আলি জানিয়েছেন, এদিন সকালে ইডির লোকজন এসে তাকে জানান, ওই ১০ লক্ষ টাকা জালিয়াতির টাকা। তাই ওই টাকা কাকে কিভাবে দিয়েছেন সে বিষয়েই তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন তার কাছে। ৭দিনের মধ্যে তার পরিচয় জানাতে বলে গেছেন ইডির অফিসাররা। হাসান আলি জানিয়েছেন, ভাল সম্পর্কের খাতিরেই এবং তাকে একটা কাজ পাইয়ে দেবার কথা বলায় তিনি সুকান্তবাবুর কথায় রাজী হয়ে যান। যদিও তিনি সুকান্তবাবুকে জানিয়েছিলেন, কোনো ঝুট ঝামেলা হবে না তো? সুকান্তবাবু তাকে জানান, তার টাকা তিনি তুলতে বলছেন। কিন্তু এটা যে জালিয়াতির টাকা সেটা তিনি কি করে জানবেন। সুকান্ত ব্যানার্জ্জীই তাকে ফাঁসিয়েছে বলে দাবী করেছেন এদিন হাসান আলি।