সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- ধর্ম যে আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে এই বিষয়টা সবসময় আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। যে কারণে নিত্যদিন আমরা নানান রকম ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ি। আসলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী গীতাকে যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো গীতা শুধুই ধর্ম নয়, গীতা আসলে সঠিক জীবন আচরণও। গীতার বলা বাণী মেনে যদি কেউ জীবন নির্বাহ করেন তাহলে তার জয় নিশ্চিত! এখন আপনি প্রশ্ন করবেন গীতার বাণী মেনে কি রাজনীতি হয়? তাহলে বলতে হবে সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু গীতার কথা বলেই যুদ্ধে বীতশ্রদ্ধ হওয়া অর্জুনকে যুদ্ধ করতে উৎসাহিত করেছিলেন।
যদি বলেন গীতা পড়ে কি একজন মানুষ তার শোক ভুলতে পারে, তাহলে বলা যায়, গীতাতেই ভগবান বলেছেন মানুষের শরীর আসলে পঞ্চ ভূতে তৈরি! এই তত্ত্ব ভালোমতো বুঝলে বোধ হয় একমাত্র ভগবান ছাড়া কেউ আমাদের আপন নয় কারণ পরমেশ্বরের ক্ষুদ্র অংশ আত্মা শরীরে প্রবেশ করেই তাকে সচল করে, নয়ত প্রাণহীন দেহ নিয়ে মানুষের কী কাজ? আর ভগবান লাভ করলেই সমস্ত সুখ দুঃখের অতীত হওয়া যায়! ভগবান লাভের পন্থাও ব্যাখ্যা করছে গীতা। কিন্তু একজন খেলোয়ার কিভাবে গীতার বাণী নেবে? লাভ-ক্ষতি জয় পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে কীভাবে জীবনে সে জয়লাভ করবে?
স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজকে এই প্রসঙ্গে একজন প্রশ্ন করেছিলেন। ওই ভক্ত তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “গীতা বলছে লাভ-ক্ষতি জয়-পরাজয় সবকিছুকে সমানভাবে নিতে। কিন্তু এক প্লেয়ার হিসেবে আমি যদি এটা পালন করি তাহলে জিতব কী করে?” এই প্রসঙ্গে স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলেছেন,“ শ্রীকৃষ্ণ ৫০০০ বছর আগে যা বলেছেন সেটাই তো আজকের ফুটবল কোচ, ক্রিকেট কোচ বলেন। তাই না? একে sportsman’s spirit বলেন তারা। এই স্পিরিট নিয়ে খেলায় জেতা যাবেনা কেন?”
মহারাজ আরও এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “শ্রীকৃষ্ণ তো কর্তব্য নিখুঁতভাবে করতে বলেছেন। বলেছেন ‘যোগীর মতো (একাগ্র হয়ে) কাজ করতে’, কাজকে সাধনা হিসেবে নেওয়া, যজ্ঞের ভাব নিয়ে করা। ফল না চাওয়ার অর্থ কী? সম্রাটের মতো কাজ করা, নিঃস্বার্থ হয়ে খেলা। খেলবো টিমের জন্য, দেশের জন্য। ক্রিকেট ম্যাচে ব্যাটিং করছি। রান্ করেই স্কোর বোর্ডের দিকে তাকানোর দরকার নেই। এতে টেনশন হতে পারে। আমি শুধু ভাল করে খেলে যাবো, অর্থাৎ নিজের কর্তব্য ভাল করে করবো। তাহলে স্কোর বোর্ডে রান্ নিজে নিজেই বাড়বে। আর না হলে ৪৯ বা ৯০ রানে এসে আমার টেনশন হবে।”