সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- খোদ বাংলায় থেকে বাংলা ভাষা নিয়ে আপত্তি। বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য হিন্দি ভাষী যুবকের হাতে মার খেতে হল এক ব্যবসায়ীকে। ঘটনা আসানসোল শহরের রুপনারায়ণপুর ডাবর মোড় বাজারের। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলা পক্ষ। পাশাপাশি পুরো বিষয়টি জানিয়ে রুপনারায়নপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আক্রান্ত ব্যবসায়ী।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায় গত ১৫ ডিসেম্বর রবিবার রাত সওয়া ৯ টা নাগাদ তিন যুবক রূপনারায়ণপুর ডাবর মোড়ে অনুপ মাজির দোকানে সিগারেট কেনেন। তারা সিগারেটের দাম হিসেবে ৬ টাকা গুগল পে-তে অনলাইনে মেটান। ব্যবসায়ীর একাউন্টে সেই টাকা জমা পড়ার ঘোষণাটি যন্ত্রে বাংলা ভাষায় উচ্চারিত হয়। আর এই নিয়েই আপত্তি তোলে ওই তিন হিন্দিভাষী যুবক। তারা অনুপ মাজিকে ওই ঘোষণা হিন্দি ভাষায় করার দাবি জানিয়ে হুমকি দেয় ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হলে আশেপাশের দোকানীরা ছুটে যায়। অবস্থা বেগতিক বুঝে “দেখে নেওয়ার” হুমকি দিয়ে বাইকে করে তিন যুবক চম্পট দেয়। অভিযোগ কিছুক্ষণ বাদে রাত দশটা নাগাদ যখন অনুপবাবু দোকান বন্ধ করছিলেন তখন ওই তিন যুবক ফিরে আসে ও তাদের মধ্যে এক যুবক আচমকা অনুপবাবুর উপর চড়াও হয় এবং তাকে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারা শুরু করে। ঘটনায় অনুপবাবু গুরুতর চোট পেয়ে রক্তাক্ত হলে তিন যুবক ফের চম্পট দেয়। পরে অনুবাবুকে উদ্ধার করে পিঠাকিয়ারি হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে রুপনারায়ণপুর বাজারের সমস্ত ব্যবসায়ী এবং বাংলা পক্ষের সদস্যরা রূপনারায়ণপুর ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখান। পরে আক্রান্ত ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগ জানান। গোটা বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ওসি অরুনাভ ভট্টাচার্য।
এদিন অনুপবাবু বলেন, ভাবতেই পারিনি এই ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে। খোদ বাংলায় থেকে বাংলা ভাষার প্রতি এই অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না।
তবে এই প্রথম নয় আসানসোল শহরে আগেও বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞাসূচক ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে কালীপুজোর মেলা উপলক্ষে হিন্দুস্তান কেবলস হাইস্কুল মাঠে এক ব্যক্তিকে জোড়বাড়ির এক যুবক বাংলা ভাষা নিয়ে কটূক্তি করেছিল। সেই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলা পক্ষ। পুলিশ এবং রাজনৈতিক মহলও ওই যুবকের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে ওই যুবক এবং তার পরিবার বিষয়টি মিটমাট করে নেন। কিন্তু সেই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলায় একদিকে যেমন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন শহরের বাঙালিরা। তবে এই ধরণের ঘটনা শুধু আসানসোল শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রতি খোদ কলকাতা শহরে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীত শিল্পী ইমন চক্রবর্তীর গানের অনুষ্ঠানেও এই ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠছে সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমে।