মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- গত ৬ই ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুর উৎসব সিজন টু ২০২৪। ধুমধাম করে খুঁটিপূজো এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর হঠাৎই ছন্দ ছাড়াই দুর্গাপুর বণিকসভার দ্বারা পরিচালিত এই উৎসব চলে এবছর। দুর্গাপুর উৎসব সিজন টুয়ের অরাজকতা নিয়ে ইতিমধ্যেই এবারের উৎসবটা যে রাজনীতির জটিল অংকের আবর্জনায় ভরা কাদা ছোড়াছুড়ির খোলা ময়দান! বিরোধী শূন্য শহরে ‘সবার হাতেই কাঠি’, কে কাকে কোথায় বধ করবে, চলছিল তার দুরন্ত লড়াই। দুর্গাপুর উৎসব সিজন-২ এর প্রথম দিন থেকেই যে দলাদলি , কাদা ছোড়াছুড়ি, নোংরামি শুরু হয়েছিল। তা দেখে সবাই বুঝেই গিয়েছিলেন যে এবছর দুর্গাপুর উৎসব পুরোটাই ‘ফ্লপ শো’ । সাংবাদিকদের সাথে দুর্ব্যবহার, ভিআইপি পাস নিয়ে সজন পোষণ, ভলেন্টিয়ারদের উৎশৃংখল আচরণ ও সর্বোপরি নেতৃত্বহীন দুর্গাপুর উৎসব এবার তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ পুড়িয়ে দিয়েছে।
আজ ১৭ই ডিসেম্বর দুর্গাপুর উৎসব সিজন ২ এর পরিসমাপ্তি ঘটলো দুর্গাপুর চিত্রলায় মেলা ময়দানে । আজকের দুর্গাপুর উৎসবের মূল মঞ্চে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা ব্যান্ডের বিখ্যাত গায়ক রুপম ও তার ব্যান্ড ফসিলস। ১২ দিনের এই দুর্গাপুর উৎসবে প্রথম এত মানুষের উপস্থিতি ঘটেছিল মেলা ময়দানে আজ। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের চিত্রলায় মেলা ময়দানে, দুর্গাপুর উৎসব প্রাঙ্গণে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের জামায়েত হয়েছিল। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ও দুর্গাপুর উৎসব কমিটির মধ্যে এই দিনের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেছিল এক চাপা উত্তেজনা। দফাই দফাই উৎসব কমিটির সঙ্গে মিটিং করা থেকে শুরু করে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের দক্ষ গোয়েন্দা বাহিনীর একাধিক আধিকারীকে নিযুক্ত করা হয় এই অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি যেন সুষ্ঠু , শান্তিপূর্ণ ও আইনশৃঙ্খলা মোতাবেক হয়।
দুর্গাপুর উৎসবের শেষ দিনে ৪০ হাজার দর্শকের ভিড়কে সামলাতে কয়েকশো পুলিশ কর্মী সাদা পোশাকে অনুষ্ঠান মঞ্চ ও তার আশেপাশে কড়া দৃষ্টি রেখে চলেছিলেন। কখনো কখনো আবার পুলিশের পক্ষ থেকে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি চালানো হয়। অবশেষে ফল ও মেলে হাতে নাতে। পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যেই কয়েক হাজার যুবক যুবতী সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষজন ফসিলসের গানের তালে ও উন্মাদনায় আনন্দে আত্মহারা হয়ে সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। তেমনভাবে কোথাও কোন গন্ডগোলের খবর পাওয়া যায়নি। এই প্রথমবার শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরে ফসিলসের এই অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিসমাপ্তি ঘটলো। এর জন্য সম্পূর্ণভাবে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ও দুর্গাপুর উৎসব কমিটির সৃজন টু এর কর্মকর্তারত। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের যে মানুষেরা দুর্গাপুর উৎসব সিজন ২ এর এন্ট্রি পাস বন্টন নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন আজ ফসিলসের অনুষ্ঠান দেখতে সমস্ত রকম বাধা তুলে নেওয়ার ফলে দুর্গাপুর উৎসব প্রাঙ্গণ প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর আবার প্রমাণ করলো এটা শান্তির , সংস্কৃতির , ঐতিহ্যের , ভাতৃত্বের , রুচিশীল, শিল্পী ও শিল্প বান্ধব ও সর্বোপরি গুণীজনদের শহরের পরিবেশের জন্য বিখ্যাত।
এদিন দুর্গাপুর উৎসব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান দেখতে আসা একাধিক দুর্গাপুর বাসিন্দা এক সুরে বলেন, “যদি প্রথম দিন থেকেই দুর্গাপুর উৎসব কমিটি সাধারণ মানুষের কথা ভেবে কোন রকম পাস বন্টন নিয়ে স্বজনপোষণ না করতেন ও সাধারণ মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার না করে ভাতৃত্ববোধ বজায় রাখতেন তাহলে এই শীতের রাত্রে আজকের মতনই প্রতিটি অনুষ্ঠানে ভিড় হতো। আশা করব আগামী বছরে উদ্যোক্তারা সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে তাদেরকে দুর্গাপুরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও শিল্পী প্রেমকে সম্মান দিয়ে সকল মানুষের জন্য বসার ও আনন্দ উপভোগ করার সুবন্দোবস্ত করবেন। দুর্গাপুর উৎসব দুর্গাপুরের সকল বাসিন্দাদের যেন আগামী বছরগুলিতে নিজেদের উৎসব হয়ে উঠতে পারে।”