eaibanglai
Homeএই বাংলায়কালো কুশ্রী নয়, বরং সৌন্দর্যের প্রতীক- কালো রংয়ের অপূর্ব ব্যাখ্যা

কালো কুশ্রী নয়, বরং সৌন্দর্যের প্রতীক- কালো রংয়ের অপূর্ব ব্যাখ্যা

সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- সাধারণত মনে করা হয় কালো মানেই কুশ্রী। কিন্তু আমাদের সনাতন ধর্ম, ঐতিহ্য ও বেদান্ত কিন্তু সেটা মনে করেনা। বরং কালো রংকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়েছে। এই বিষয়ে একবার একজন ভক্ত স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজকে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি জাজ্ঞাসা করেছিলেন যে, আমাদের সমাজে কেন কালো মেয়েকে কুশ্রী বলা হয়? বিয়েতে ফর্সা মেয়েদেরই চাহিদা কেন? এর উত্তরে স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলেন, “আমাদের সনাতন ধর্মের দুই প্রধান অবতার রাম ও কৃষ্ণ কেউই ফর্সা ছিলেন না। রাম নবদুর্বাদলশ্যাম আর কৃষ্ণ মানেই তো কালো, এমনকি মহাভারতে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী দ্রৌপদীও ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গী, সেই হিসেবে দেখলে আমাদের ঐতিহ্যের সমাজে কালো কুশ্রী নয়, বরং সৌন্দর্যের প্রতীক।”

এরপর মহারাজ বলেন, “কিন্তু সৌন্দর্যকে দেখতে হলে শিল্পীর চোখ চাই। বিয়ের আগে যারা মেয়ে দেখতে যান তাদের মধ্যে এই শিল্পীর চোখ কয়জনের থাকে? তাদের বেশির ভাগই তো এই বিষয়ে যদু-মধু! সমাজের অনুকরণে তারা চলেন। তাদের মতামতকে এত গুরুত্ব দিচ্ছো কেন?”

এরপর মহারাজ একটা সত্য গল্প বলেন সেই ভক্তের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে। মহারাজ বলেন, “গত শতাব্দী। এক অনুষ্ঠানে কলকাতার নামী দামী মানুষেরা উপস্থিত। সভার আগে বড় হলঘরে অতিথিরা নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। পুরুষেরা ভাল পোশাক পরে এসেছেন। মহিলারা সাজসজ্জা করে ভাল শাড়ি ও অলঙ্কারে ভূষিত। সৌন্দর্যের মেলা যেন। অতিথি হিসেবে রয়েছেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। কিছুক্ষণ পরে এলেন ভগিনী নিবেদিতা। দরজায় দাঁড়িয়ে রইলেন। পরনে সাধারণ এক আলখাল্লা, মাথার উপরে চুল ঝুঁটি করে বাঁধা। দূর থেকে অবনীন্দ্রনাথ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তাঁর দিকে। এতো সুন্দর! শিল্পীর মনে হলো যেন কালিদাসের কাব্য থেকে মহাশ্বেতা উঠে এসেছেন। নিবেদিতা যখন ভেতরে এলেন, অবনীন্দ্রনাথের মনে হলো চাঁদ উঠলে যেমন নক্ষত্রেরা ম্লান হয়ে যায় তেমনি নিবেদিতার সৌন্দর্যের কাছে সব সুন্দরী মহিলারা নিষ্প্রভ হয়ে গেছেন। বুঝলে, সৌন্দর্যকে অনুভব করতে হলে শিল্পীর চোখ চাই। সবার তো তা থাকে না।”

মহারাজ এরপর বেদান্তের কথা বলেন, যেখানে লেখা আছে, সৌন্দর্য বিভিন্ন স্তরের হয়, দৈহিক সৌন্দর্যকে সবচেয়ে নীচের স্তরের সৌন্দর্য হিসেবে ধরা হয়। এরচেয়ে উঁচু স্তরে আছে প্রাণময় স্তরের সৌন্দর্য যা শিশুদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এরপর মনের সৌন্দর্য, এরপর বিজ্ঞানময় কোষে আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য।” এক‌ইসঙ্গে মহারাজ বলেন, “দৈহিক সৌন্দর্য সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী। এর থেকে বেশি আয়ু প্রাণপ্রাচুর্যের। মানসিক সৌন্দর্য বৃদ্ধাবস্থায়ও থাকে। আর আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য থাকে জীবনের শেষদিনেও। প্রথম দুই স্তরের সৌন্দর্য মানুষকে উপরে নিয়ে যেতে পারে, নীচেও নামাতে পারে। কিন্তু মানসিক ও আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য শুধু উপরেই ওঠায়। প্রথম দুটি সাময়িক হলেও মানুষ এটা পায় জন্মসূত্রে। কিন্তু মানসিক ও আত্মিক সৌন্দর্য অর্জন করতে হয়। তুমি শুধু দৈহিক সৌন্দর্যে গুরুত্ব দিচ্ছো কেন? নিজের দক্ষতা, প্রতিভা, উদারতা, সাহস, সৃজনী শক্তি, সংবেদনশীলতা প্রকাশ করো। প্রকৃত সৌন্দর্য তো এসব। শেষে বলি, নিজের সৌন্দর্য প্রমাণ করার জন্য তুমি পুরুষের সার্টিফিকেট চাইছো? এ তো নারীত্বের অপমান।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments