নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– আজ ১২ জানুয়ারি আধুনিক ভারতের রূপকার স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে জন্মগ্রহণ করেন নরেন্দ্র নাথ দত্ত। পরে কলকাতারই এই যুবক সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত হন স্বামী বিবেকান্দ নামে। ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা তথা ভারতীয় দর্শন তাঁর হাত ধরেই প্রথম পাড়ি দিয়েছিল আমেরিকায়। পরে তা বিশ্বি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর অনুপ্রেরণায় এক সময় দেশ মাতাকে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত করতে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এ দেশের শত শত যুবক তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো সাধীনতা সংগ্রামীও স্বামীজীর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ব্রিটিশ ভারতে তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। তাই তাকে যুগনায়কও বলেও অভিহিত করা হয়। ১৯৮৫ সালে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটিকে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে ঘোষণা করে তত্কালীন কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই দেশজুড়ে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটি জাতীয় যুবদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
যুব সমাজের প্রতি স্বামীজির বার্তা ছিল “ওঠো , জাগো এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।” কাজ সম্পর্কে বিবেকানন্দর বার্তা, “সারাদিন চলার পথে যদি কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হও, তাহলে বুঝবে তুমি ভুল পথে চলেছ।” তাঁরই বক্তব্য, “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” এই বাণীর মধ্যে দিয়েই কর্মযোগকে তিনি সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
চরিত্র গঠন সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য ছিল, “নিজের উপর বিশ্বাস না এলে, ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস আসে না।” তাঁর কথায়, “যে রকম বীজ আমরা বুনি, সে রকমই ফসল আমরা পাই। আমরাই আমাদের ভাগ্য তৈরী করি, তার জন্য কাউকে দোষারোপ করার কিছু নেই, কাউকে প্রশংসা করারও কিছু নেই। ” সঙ্গে ভয়ডরহীন হয়ে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “ভয়ই মৃত্যু, ভয়ই পাপ, ভয়ই নরক, ভয়ই অসাধুতা, ভয়ই ভুল জীবন, এই বিশ্বের সমস্ত নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা ও ধারণা, এই ভয়ের অসৎ শক্তি থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।”
আজ বেলুড় মঠ-সহ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন কেন্দ্রে পালিত হচ্ছে স্বামীজীর জন্মবার্ষিকি উৎসব । উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে স্বামীজির বাড়িতেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সারা দেশজুড়ে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে পালিত হচ্ছে যুব দিবস।
সারা দেশেরের পাশাপাশি দুর্গাপুরের বিধাননগরের বিধান স্মৃতি মঞ্চের উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পালিত হচ্ছে বিবেক চেতনা উৎসব। এদিন সকালে প্রভাতফেরী দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কচিকাঁচা থেকে বয়স্ক সকলেই এই প্রভাত ফেরীতে অংশ নেযন। প্রভাতফেরীটি বিধান নগর হাউসিং কলোনি পরিক্রমা করে। এরপর ঠাকুর, মা ও স্বামীজীর পুজো শুরু হয় মঞ্চেই। পাশাপাশি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয় এদিন। দুপুরে আয়োজন করা হয় নারনারায়ণ সেবার। এদিন সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের, যেখানে সুরের মুর্ছনায় মাতাবেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায়। আগামীকালও থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শীতবস্ত্র বিতরণ। সব মিলিয়ে স্বামীজীর জন্মবার্ষিকি উপলক্ষ্যে যেন উৎসবের আবহ বিধাননগর জুড়ে।
বিধান স্মৃতি মঞ্চের কর্ণধার তথা দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসনিক মন্ডলীর সদস্য ও আইএনটিটিইউসির জেলা কোষাধ্যক্ষ দীপংকর লাহা জানান, স্বামীজীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা প্রতিবছর বিবেক চেতনা উৎসব পালন করে থাকেন। কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সেবামূলক কাজের মাধ্যমে তাঁরা এই সময়টা নিজেদের নিয়োজিত রাখেন।