জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জীঃ- বিরল বা বিরলতম না হলেও গত আগষ্ট মাসে আরজি করের মত এলিট হাসপাতালে ঘটে যাওয়া তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন ছিল নৃশংস এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নাই। তবে একটা জায়গায় ঘটনাটি ছিল বিরল বা বিরলতম। এর আগেও হাথরস, কামদুনি, বাণতলা ইত্যাদি জায়গা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিউরে ওঠার মত অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। বাম আমলে একাধিক গণধর্ষণের সাক্ষী এইরাজ্য। উত্তরপ্রদেশের একাধিক নৃশংস ধর্ষণের ঘটনা সাধারণ মানুষকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। মণিপুরের ঘটনা ছিল চরমতম লজ্জার। কিন্তু এই প্রথম আরজি করের নৃশংস ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এই রাজ্য সহ অন্যান্য রাজ্যের নাগরিক সমাজ উত্তাল হয়ে ওঠে। তারা প্রতিবাদ আন্দোলনে নামে। ঘটনার প্রতিবাদে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে মহিলারা প্রতিবাদ আন্দোলনে নামে। দেশের বাইরেও প্রতিবাদ দেখা যায়। সত্যিই এটা এক বিরলতম ঘটনা। সবার একটাই দাবি অপরাধী বা অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। এটা নিয়ে কোনো সংশয় থাকতে পারেনা।
তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রাই নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিবিআই। আপাতত তারাও সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আগামী ১৮ ই জানুয়ারি শিয়ালদহের ব্যাংকশাল আদালত তার শাস্তি ঘোষণা করবে- আপাতত এটাই ঠিক আছে।
তারপর থেকেই আবার একদল রাস্তায় নামে। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আদালত সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করায় তারা আদৌ খুশি নয়। আন্দোলনের সময় তারা যাদের দোষী বলতে চেয়েছিল দোষী হিসাবে তাদের নাম না থাকায় তারা স্পষ্টত হতাশ। যদিও তারা সেটা স্পষ্ট করে বলছেনা।
প্রথমে আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। পরে বাম ও অতিবামদের সৌজন্যে ঘটনাটি রাজনৈতিক রূপ পায়। জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ ধর্মঘটের নামে সরকারকে ব্ল্যাকমেলিং করতে শুরু করে। অপরাধীর শাস্তির পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ মুখ্য হয়ে ওঠে। ঘটনাটি নৃশংস হলেও তার উপর ভরসা না রেখে একের পর এক ‘ফেক নিউজ’ ও গুজব ছড়ানো শুরু হয়। ‘আমি সোমা বলছি…’-র মত অডিও সামনে আসে। অরাজনৈতিক আন্দোলনের রাজনৈতিক রূপ দেখে সাধারণ মানুষও ধীরে ধীরে নিজেদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে নেয়।
অবশেষে রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুনানির শেষে আদালত রায় ঘোষণার দিন নির্দিষ্ট করে এবং সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করে। সেদিনই জানা যাবে কোন কোন প্রমাণের ভিত্তিতে সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের মক্কেলকে রক্ষা করার জন্য কী কী যুক্তি দিয়েছেন।
আদালত সঞ্জয়ের জন্য কী শাস্তি বরাদ্দ করবে সেটা আমাদের জানা নাই। তবে এটা নিশ্চিত রায় ঘোষণার পর মুহূর্তেই সেদিন থেকেই আবার শুরু হবে রাত দখলের রাজনীতি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে। আবার হয়তো সরকারি হাসপাতালে কর্মরত জুনিয়র চিকিৎসকরা ধর্মঘট করে পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটাবে। মুখে অন্য কথা বলা হলেও মূল লক্ষ্য হবে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি। অর্থাৎ ঘুরপথে সেই ক্ষমতা দখলের লড়াই। আর সেটাই আগামী ক’দিন ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মুখরোচক বিষয় হবে। আরও কী কী হবে সেটা দেখার জন্য ১৮ ই জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন যেটা চলছে সেটা নিছক প্রস্তুতি পর্ব।