নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- সফলতার যেমন কোনো সীমারেখা হয়না না তেমনই সফল হওয়ার জন্যও বয়সেরও কোনো সীমা নেই। সদিচ্ছা থাকলে যে কোনো বয়সেই সফল হওয়া যায়। এমনটাই প্রমাণ করেছেন দুর্গাপুরের গৃহবধূ ডক্টর পারোমি গোস্বামী। তিনি জিতে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক স্তরের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ফরএভার স্টার ইন্ডিয়ার মিসেস ইউনিভার্স ২০২৪ -এর শিরোপা।
তবে তাকে গৃহবধূর ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না, কারণ তিনি বর্তমানে নানান সামজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে তিনি ভারত সরকারের অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। পাশাপাশি কাজ করছেন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে। পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার সভাপতি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের কনভেনার পদে রয়েছেন তিনি । এছাড়াও তিনি একজন দক্ষ শো অর্গানাইজার।
তবে তাঁর সাফল্যের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকেই। ২০০৪ সালে বিবাহিত জীবন শুরু করেন উখড়ায় বড় হয়ে ওঠা পারোমি। বাবা ছিলেন কোলিয়ারির উচ্চ পদস্থ আধিকারিক। উখড়াতেই স্কুল জীবন শেষ করে দুর্গাপুর মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে স্নাতক হন। আর পাঁচটা মেয়ের মতোই পড়াশুনা, বিয়ে, সংসার এসেছে সময়ের নিয়মে। তবে বিয়ের পর দুটি ছেলে মেয়ে ব্যাঙ্কে কর্মরত স্বামী, সুখী সংসার নিয়ে থেমে থাকেননি দুর্গাপুরের এই গৃহবধূ। বরং স্বামীর উৎসাহে একাধিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে থাকেন। তাতে ছোটবড় সাফল্যও পান। তবে বড়সড় সফলতা আসে ২০২২ সালে। মিডিয়া কুইন দুর্গাপুরের শিরোপা পান তিনি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২৩ সালে গ্ল্যামার অফ কুইন, দুর্গাপুর ও মিসেস তিলোত্তমা, কলকাতা শিরোপা পান তিনি। এরপর ২০২৪ সালে একটি জাতীয় স্তরের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা এএফটি মিসেস ইন্টারন্যশনালের জন্য সিলেক্ট হন তিনি। সারা দেশ থেকে বাছাই করা প্রতিযোগীদের নিয়ে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হওয়া ওই প্রতিযোগিতায় মিসেস ইন্টারন্যশনাল (ফার্স্ট রানার আপ) এর শিরোপা পান তিনি। সেখান থেকেই নির্বাচিত হন ২০২৪ মিসেস ইউনিভার্সের জন্য এবং জয়পুরে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড ফিনালেতে তাঁর মাথায় ওঠে শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর মুকুট।
স্বামীর উৎসাহ থাকলেও কোনো ব্যক্তি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনোরকম গ্রুমিং কোর্স করেননি পারোমি। নিজেই নিজেকে গ্রুম করেছেন, গড়ে তুলেছেন। আর তাতে তাঁকে সাহায্য় করেছে তাঁর টিনএজ মেয়েও। পারোমির কথায় মমতা শঙ্করের কাছে নাচ শিখেছেন ও তাঁর ব্যালে গ্রুপের সঙ্গে বহু জায়গায় অনুষ্ঠানও করেছেন। সেটা তাঁকে অনেকটা আত্মবিশ্বাস দিয়েছে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার পথে। ব্যাস ওইটুকুই। মিসেস ইউনিভার্সের মতে, আত্মবিশ্বাস ও সঠিক ব্যক্তিত্ব যে কোনো ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দুর্গাপুর ও সংলগ্ন এলাকার কিরোশী ও তরুণীদের জন্য তিনি আগামী দিনে কিছু করতে চান। সুন্দর ও সঠিক ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য় করে ওদের সঠিক পথে এগিয়ে দিতে চান। তবে নতুন প্রজন্মের কাছে পারোমির বার্তা, “সত পথে কর্ম করে গেলে সে একদিন সফল হবেই।”
সততা পারোমির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মিসেস ইউনিভার্সের শিরোপা পাওয়ার পর অনেক নামিদামি সংস্থা থেকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার সুযোগ আসলেও তিনি বেছে নেন ভারত সরকারের অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশনকেই। পারোমি জানান ছোট থেকে মাকে দেখেছেন সবসময় মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে ও নানাভাবে সাহায্য করতে। মায়ের সেই কাজ ছোট থেকেই অনুপ্রেরণা দিয়েছে মানুষের জন্য কাজ করার। এই কাজই তার ভালোলাগা, ভালোবাসা। তাই আগামী দিনেও মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চান তিনি। পারোমির কথায়, “মৃত্যুর পর তো সঙ্গে করে কিছু নিয়ে যাওয়ার নেই,” তাই মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চান। পারোমির নামের আগের ডক্টর উপাধিটাও কিন্তু তাঁর মানবাধিকার কর্মী হিসেবে মানুষের কাজ করার জন্যই পাওয়া।